প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২১ , ৬:২১:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ
রফিকুল ইসলাম, যশোরঃ
চিত্রা নদীর একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করেছেন অসৎ মৎসজীবীরা। তারা নদীতে আড়বাঁধ দিয়ে দোয়ারি জালে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মা মাছসহ রেনু নিধন করছেন। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে জনসাধারণের নদীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন।
মৎসজীবী ও জেলে সম্প্রদায়ের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মরা চিত্রা নদী ফিরে পায় প্রাণ। এ সময় চিহ্নিত অসৎ মৎসজীবীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আড়বাঁধে ধরা দেশি মাছ ও সংশ্লিষ্ট তহশিলদারদের নগদ নারায়ণে তুষ্ট করে থাকেন। ‘জাল যার জলা তার’ হলেও বাস্তবে নদী পাড়ের জেলে, বাগদি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষমতাধরদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের আন্দোলপোতা, দলেনগর, কাঠামারা, বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের তৈলকুপ, মাঝিয়ালী, বন্দবিলা ইউনিয়নের মথুরাপুর (কাজিপাড়া), ধর্মগাতী, ঘোপদূর্গাপুর, চন্ডিপুর, বন্দবিলা, বড়খুদড়া ও পাঠান পাইকপাড়া এলাকায় চিত্রা নদীতে প্রায় ১৫টি আড়বাঁধ দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে অল্প পানিতে আঁড়বাধ তৈরির কাজ শুরু করা হয়। দু’হাত পরপর মোটা, লম্বা ও শক্ত বাঁশ পুতে দাঁড় করানো হয় বাঁধের মূল কাঠামো। পানি বেড়ে গেলে নদীর দু’প্রান্ত থেকে ছোটছোট বাঁশ পুতে ‘ভি’ আকৃতি করা হয়। এর আগে তৈরি করে রাখা বাঁশের ফালি দিয়ে বানানো চাঁন, পানির গভীর থেকে উপর পর্যন্ত বেড়া দেয়া হয়। বিশেষ এই বেড়ার কাজ পানির প্রবাহকে আটকিয়ে ‘ভি’ আকৃতির শেষ অংশের খোলা মুখে প্রবল স্রোত তৈরি করা। সেখানে বিশেষভাবে তৈরি এক প্রকারের জাল পাতা হয়। যশোরের ভাষায় যাকে ‘সুতি জাল’ বলা হয়ে থাকে। জালগুলো এতই সুক্ষ্ম যে পানি ছাড়া কিছুই বের হতে পারে না। প্রতি দু’ঘন্টা পরপর ১৫-৩০ লম্বা এই জালে ধরা পড়া মাছগুলো পানিতে তোলার আগেই মারা যায়। এলাকায় এসব মাছ বিক্রি করা হয় না। দিন-রাতে সংগ্রহ করা মাছ রাতের আঁধারে শহরে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানান, ‘অসৎ এসব মৎসজীবী তাদের নদীতে নামতে দিচ্ছে না। ইতিপূর্বে মাছ ধরতে সুতি (কারেন্ট) জালের ব্যবহার করা হলেও এ বছর ‘দোয়ারি’ জাল ব্যবহৃত হচ্ছে। ভয়ংকর এ জাল চায়নার তৈরি। যা কারেন্ট জালের থেকেও কয়েকগুণ সুক্ষ্ম।’
সাইফুর রহমান নামে এক মৌসুমী মৎসজীবী বলেন, ‘একটি আড়বাঁধে বছরে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। নদীতে এখন দেশি প্রজাতির বোয়ালের পোনার সাইজ দেড় থকে আড়াই ইঞ্চি। এছাড়াও হরেক রকমের দেশি মাছের রেনু ও ধানী পোনা দেখা যাচ্ছে। বিলুপ্ত প্রায় যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে, যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নাম জানে না।’
বাঘারপাড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা পলাশ বালা বলেন, ‘আড়বাঁধ উচ্ছেদের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জনানো হয়েছে। প্রশাসনকে ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়াটা আমাদের জন্য ঝুঁকির।’ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. মুনিম লিংকন বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। আড়বাঁধ উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন একনেকে অনুমোদন অপেক্ষায় চিত্রার নদীর ৩৮ কিলোমিটার খনন কাজ। এর আগে উচ্ছেদ অভিযান চালালে পুনরায় দখলদাররা নদীর দখল নিতে পারে।’ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রশাসনকে কোনভাবেই ম্যানেজ করার সুযোগ নেই। দ্রুত অবৈধ আড়বাঁধ উচ্ছেদসহ অসৎ এসব মৎসজীবীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’