প্রতিনিধি ৬ জুলাই ২০২৪ , ৭:৪০:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি গত বছর ৫ এপ্রিল থেকে দীর্ঘ ১৪ মাস যাবত তালাবদ্ধ গ্যারেজে পড়ে আছে।
ফলে জরুরী প্রয়োজনে রোগী পরিবহণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দোহাজারী পৌরসভাসহ পার্শ্ববর্তী সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, হাশিমপুর, ধোপাছড়ি ও সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, ধর্মপুর, পুরানগড় ইউনিয়নের রোগিসহ স্বজনদের। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিতে হচ্ছে তাঁদের। সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় পড়েছেন গরিব-অসহায় রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অত্যাধুনিক এ্যাম্বুলেন্সটি (চট্টমেট্টো-ছ ৭১-০২৪৮) বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ সরফরাজ খান ও চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শিশির কুমার রায়ের উপস্থিতিতে দোহাজারী হাসপাতালের তৎকালীন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন তিনি।
এ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ হলেও চালকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। চালকের পদ না থাকায় ২০১৪ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্য হাসপাতাল থেকে ডেপুটেশনে চালক এনে এ্যাম্বুলেন্সটি সচল রাখা হয়। ডেপুটেশনে আসা চালক তার নির্ধারিত কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে হাসপাতালের পশ্চিম পার্শ্বের তালাবদ্ধ গ্যারেজে পড়ে ছিলো এ্যাম্বুলেন্সটি।
এরপর ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দোহাজারীর অনলাইন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দোহাজারী ব্লাড ব্যাংকের আয়োজনে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার ৭৫টি সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দোহাজারী হাসপাতালের অচল এ্যাম্বুলেন্স সচল করার পাশাপাশি হাসপাতালটিকে ৩১শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন করে। তারই প্রেক্ষিতে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এম.পি’র নির্দেশে এ্যাম্বুলেন্সটি প্রয়োজনীয় মেরামত শেষে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালক নিয়োগ দিয়ে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর থেকে পুনরায় রোগী পরিবহন শুরু হয়।
তবে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর রোগী নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) যাওয়ার পথে পটিয়া উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ৮ মাস এ্যাম্বুলেন্সটি তালাবদ্ধ গ্যারেজে পড়ে ছিলো। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করতে উর্ধ্বতন মহলে বার বার তাগদা দিয়েও কোন সুফল পায়নি। এ্যাম্বুলেন্সটির এ অবস্থা অবগত হয়ে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসেবলিটির অংশ হিসেবে এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ কেরানীহাট শাখা।
কেরানীহাটের একটি ওয়ার্কশপ থেকে মেরামত কাজ শেষ করে ২০২২ সালের ৪ জুলাই দুপুরে চন্দনাইশ উপজেলার তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুমা ভট্টাচার্য্যের কাছে গাড়ীটির চাবি হস্তান্তর করেন ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ কেরানীহাট শাখার এসপিও এন্ড ম্যানেজার অপারেশন মো. বেলাল হোসেন। এ্যাম্বুলেন্স সচল হওয়ার পর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দোহাজারী হাসপাতাল থেকে চমেক হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগী পরিবহন করা হয়। ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার কারনে গত বছর ৫ এপ্রিল থেকে গ্যারেজে পড়ে থাকলেও এ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ্যাম্বুলেন্স সচল থাকাবস্থায় গুরুতর আহত রোগী সহ মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য প্রতি কিলোমিটারে দশ টাকা হারে ফি দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল।
এ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে পড়ে থাকায় এ অঞ্চলের গরিব-অসহায় রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে ভাড়া করা প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোন যানবাহনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে হয়। এতে এ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্বেও রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুততম সময়ে এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনরায় রোগী পরিবহন উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।