প্রতিনিধি ১৪ মে ২০২৪ , ৬:৩২:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
এ নীড়ে ফেরায় তৈরি হয়েছে আনন্দাশ্রু’র এক অভূতপূর্ব সম্মিলন। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে নাবিকদের বরণ করতে পরিবার, বন্দর কর্তৃপক্ষ, গণমাধ্যমকর্মীসহ যেন জনস্রোত নেমেছিলো। মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় এমভি জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজে করে বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছেছেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। এর আগে দুপুর ১২ টার দিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় জাহাজটি।
পরে ২৩ নাবিককে বরণ করে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সময় নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। বন্দরে পৌঁছার পর সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান নাবিকরা। বন্দরে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্ব স্ব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন নাবিকরা। সোমবার বিকেলে নাবিকদের নিয়ে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটি কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে ভিড়ে। সেখানে চলছে চুনাপাথর খালাস কার্যক্রম। ‘এমভি আবদুল্লাহ’র দায়িত্ব নিয়েছে নতুন ২৩ নাবিক।
মুক্ত নাবিকেরা হলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ, প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রুকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। নাবিকরা হলেন ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মো. আনওয়ারুল হক, মো. আসিফ উর রহিম, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, মো. শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।
নাবিকদের বরণ করে নেয়া উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেয়া সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও সচিব ওমর ফারুক। এছাড়া জাহাজটির মালিক কেএসআরএম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘ মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে নীড়ে ফিরে আসতে পারা অনেক খুশির খবর। সরকার যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে বন্দিদশা থেকে নাবিকদের মুক্ত করার বিষয়টি অনেক সহজ হয়েছে। তাদেরকে ফিরে পেয়ে পরিবারের সাথে সাথে আমরাও ভীষণ খুশি।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মোঃ আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘ বন্দিদশা থেকে মুক্তি মানে আলোর পথে। পরিবারের কাছে ফিরে আসার আনন্দ আমাদের কাছে পুনর্জন্মের মতো। দুঃসহ স্মৃতি ভুলে আমরা কিছুদিন সময় নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। সন্তানদের চেহারা দেখার জন্য এতদিন উদগ্রীব ছিলাম। আমাদের জন্য দেশবাসীর উৎকণ্ঠা আমরণ মনে থাকবে। সবার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। উল্লেখ্য, আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে। ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়।
স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শেষে মঙ্গলবার দেশে ফিরলে পরিবার ও দেশবাসীর কাছে স্বস্তি নেমে আসে।