রংপুর

উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে কাজের সন্ধানে শ্রমিকের ঢল

  প্রতিনিধি ৮ জুন ২০২৪ , ৪:০৬:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে কাজের সন্ধানে শ্রমিকের ঢল

কুড়িগ্রামের উলিপুরে কাজের সন্ধানে শত শত শ্রমিক নারী ও পুরুষ তিস্তা নদীতে নৌকায় পারাপার করতে দেখা যায়। সকাল ৭টা পুবের আকাশে সূর্য আলো দিচ্ছে। তিস্তার চরে কাজের সন্ধানে যেতে নৌকা দিয়ে পারাপার করতে তীরে ভীর জমাচ্ছেন পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শ্রমিকের সংখ্যাও। এ সময় নৌকায় উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় এসব শ্রমিকের। শ্রমিকরা কাজের জন্য শ্রমিক দলনেতার সাথে কথা বলে কাজ সংগ্রহ করেন। অনেকে কাহারো সাথে যোগাযোগ না করেও কাজ পেতে বুকভরা আশা নিয়ে যাচ্ছেন ভেসে উঠা তিস্তার চরাঞ্চলে। কেউ থেমে নেই, তিস্তার এপার থেকে ওপারে নৌকা পার হয়ে চরে সারি সারি ভাবে পায়ে হেঁটে ছুটছেন কাজের সন্ধানে।

জানা গেছে, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, অন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চরে বাদামের চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে।

সকাল সাতটা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিস্তার পাড়ে সরেজমিন অবস্থান করে দেখা গেছে শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষের হাপিত্যেশের চিত্র। বর্তমান ঊর্ধ্বগামী বাজার দর নিম্ন আয়ের এসব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এক দিনের কামলা যাওয়ার জন্য কত যে ব্যাকুলতা সেখানে না দাঁড়ালে উপলব্ধি করা যাবে না। একে তো বর্ষার মৌসুম হওয়ায় কমে গেছে কাজ। তিস্তার চরাঞ্চলে বর্তমান মূলত বাদাম উঠানোর জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন।

এখানের শ্রমিকরা বাদাম উঠানো সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। বর্তমানে কাজ কম থাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করছেন পুরুষ শ্রমিকরা। আবার নারী শ্রমিক ৩০০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করছেন। কাজের জন্য যেন শ্রমিকদের ব্যাকুলতার শেষ নেই। কাজ না পেলে কারো ঘরে তিন বেলা ভাত জুটবে না সে কারণে কাজের জন্য শ্রমিকদের ব্যাকুলতার শেষ নেই। এদিকে বড়দের সঙ্গে আসে ছোটরাও। নারী শ্রমিকেরা নেই পিছিয়ে।

সংসারের হাল ধরতে কিংবা দীর্ঘ সময় স্বামীর অসুস্থতাজনিত বা অন্য কোনো কারণে আয় রোজগার করতে হয় তাঁদের। মা তাঁর মেয়েকে নিয়ে আসে কাজের সন্ধানে। যে বয়সে নারীদের দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার কথা, সে বয়সে জীবিকার টানে কাজে আসেন তাঁরা।উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের লাঠির খামার এলাকার আবিরন বেওয়া (৭০) জানান, আমি ও আমার স্বামী সংসারে।

স্বামী অসুস্থ চলতে পারেনা চোখেও দেখেনা। আমাকে এ বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, বয়সের কারণে কাজ করতে কষ্ট হয়। মানুষও তাকে কাজে নিতে চায় না বয়স দেখে। বয়স্কভাতা না হওয়ায় সরকারি ভাতা পান না। তিনি কাজে না আসলে চুলায় আগুন জ্বলে না। চরাঞ্চলে কাজ করে দিনে যে টাকা মজুরি পান তা থেকে সয়াবিন তেল মোটা চাল ও সবজি কিনতেই টাকা শেষ। সব জিনিসের দাম বেশি অনেক কষ্টের মধ্যে পড়েছি বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

তিস্তার চরাঞ্চলে কাজ করতে আসা থেতরাই বাজার এলাকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বলেন, আমরা গরীব মানুষ কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে হয়। সারাদিন কাজ করে সামান্য মজুরি পেয়ে বাবার হাতে দিয়ে দিবো। তিনি আরও বলেন, কাজ নাই তো খাওন নাই। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। গরিবেরা খেয়ে বাঁচবে এই উপায় নেই। দিনদিন উপায় হারা হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমাদের দিকে নজর দেওয়ার কেউ নাই।

এছাড়া তিস্তার পাড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের মধ্যে মঙ্গা মিয়া, মহুবর রহমান, মহির আমীন, মনোয়ারা বেগম, নুরজাহান বেগম ও জামেনা বেগম সহ আরও অনেক পুরুষ ও নারী শ্রমিক বলেন, এসময় উঁচু এলাকায় কাজ নেই বললেই চলে। তাই তিস্তার চরে বাদাম উঠানোর কাজ করতে যাচ্ছি।

এছাড়া এ এলাকায় চরাঞ্চল না থাকলে এ সময় আমাদের অনেক আর্থিক সমস্যায় পড়তে হত।তিস্তার পাড়ের ঘাটের মাঝি মকবুল হোসেন জানান, প্রতিদিন সকালে এপার থেকে ওপারে ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক পারাপার করেন। বর্তমান তিস্তার চরাঞ্চলে বাদাম উঠাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন চাষিরা। তিস্তা নদী বেষ্টিত থেতরাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা জানান, আমার ইউনিয়ন তিস্তা নদী বেষ্টিত। প্রতি বছর তিস্তার ভাঙ্গনে শত শত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অনেক লোক নিঃস্ব হয়ে যায়।

ফলে দারিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি। তিস্তার চরাঞ্চল না থাকলে অনেক অসহায় মানুষের কষ্ট হত। বর্তমান চরাঞ্চলে বাদাম উঠানো সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ চলছে। সেখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content