প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২৪ , ৩:৪৮:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর ‘লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কের’ দেড় কোটি টাকার কাজ ফেলে রেখে আবাও উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদার।
একবছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এর আগে একই সড়কের ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব বরাদ্দের টেন্ডার ঠুনকো কারণ দেখিয়ে বাতিল করেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ। একই সড়কের কাজ নিয়ে ৪ বছর আগেও মেসার্স শাহ জাব্বরিয়া ও মেসার্স ফোরক আহমেদ এন্ড সন্স নামক দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও ছিলেন। ফলে, সড়কের কোন কাজ হয়নি। বর্তমান কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ সম্পন্ন করতে এলজিইডি কর্মকর্তারা তাগিদ দিলেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে স্থানীয় লোকজন চরম দূর্ভোগে রয়েছেন।
এলজিইডির সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কটি সর্বশেষ ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (প্রায়) ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান ‘মেসার্স গণি কনস্ট্রাকশন’ নামের নগরীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী, কাজ শুরু করলেও হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
সড়কটির বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তথ্য পাওয়া যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কর্ণফুলী আনোয়ারা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রচেষ্টায় লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সংযোগ সড়কে দুটি কালভার্টসহ সড়কটি নির্মাণে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে টেন্ডার হয়েছিলো।
পরে ঠিকাদার নিয়োগ হলো। কিন্তু সংস্কার বা কোন কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ে বরাদ্দ পাওয়ার পর টেন্ডার শেষ করা হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির কাজ কেন শুরু করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানিয়ে ছিলেন, উপজেলা রাজস্ব বিভাগ থেকে টেন্ডার দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্পের অধীনে হওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি। গ্রেটার চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্প থেকে কাজটি শিগগিরই সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’
তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্বেও টেন্ডারটা বাতিল করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। নতুন করে টেন্ডার হলেও সড়কটির দিকে নজর নেই কারো। ঠিকাদার করছেন নানা গড়িমসি। ফলে, জনদূর্ভোগ বেড়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে সড়কের ভাঙা অংশ পানিতে ডুবে থাকে। আর জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়।
যদিও বিকল্প হিসেবে দুই কিলোমিটার দূরের আইকেসি সড়ক বর্তমান সাইফুজ্জামান চৌধুরী সড়ক হয়ে ঘুরে আসতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ রাজা ও তৎকালিন উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ঢাকা এলজিইডি হেড অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে পুনরায় সড়কের অংশ বর্ধিত করে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দে সড়কটি টেন্ডার করেন। পরে ঠিকাদার নিয়োগ হয়।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ই-টেন্ডার হয়। যার টেন্ডার আইডি ছিলো ৫২৭৩৯৯। রাজস্ব খাত থেকে টেন্ডারটি অর্গানাইজ করেছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ। ওই প্যাকেজের পার্ট এ’তে ছিল লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক ৫০০-৯০৭ মিটার পর্যন্ত আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন। পার্ট বি’তে ছিল একই সড়কে অন্য অংশে ৫০ মিটার আরসিসি বক্স-কালভার্টসহ ৫৩৩ মিটার লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক নির্মাণ করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন,’ ঠিকাদারকে বাতিল করতে যতটুকু ব্যবস্থা নেবার আমি নিচ্ছি। অলরেডি চিঠি লেখা হয়েছে।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে কাজ শুরু করছেন না। ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে না। সুতরাং শিগগিরই রি-টেন্ডার করে কাজটি করা হবে।’
এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. ওসমান গণি বলেন, ‘অন্যদিকে ফান্ডের একটা সমস্যা ছিলো তাই কাজটি করতে পারিনি। বর্তমানে সেটা সমাধান হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার জানা মতে ঐ রাস্তায় একটা কালভার্ট এর কাজ চলছে।’
এলজিইডি’র চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, ‘বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’