প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২৪ , ৩:৩২:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগে পড়েছেন আশ্রয় নেয়া বানভাসিরা। এখনো তাদের বাড়িতে হাটু ও কমর পর্যন্ত পানি থাকায় নিরুপায় হয়ে থাকতে হচ্ছে ঠাঁই নেয়া বাঁধের রাস্তায়।
এ সকল আশ্রয় নেয়া লোকদের দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। পাশাপাশি তীব্র হচ্ছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকটও। তারা ঘরবাড়ি বানের পানিতে রেখে এসে রাস্তায় তাবুর নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা জানান, হামরা প্রায় আট দশদিন থাকি বাঁধের রাস্তায় পরিবার নিয়ে তাবুর নিচে পড়ে আছি হামার খবর কেউ নিলোনা।
আমরা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা দেখা দেয়। বন্যার কারনে ৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানের ঢল, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার সাহেবের আলগা, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ।
বন্যা কবলিত হওয়ায় এসব এলাকায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসকল বানভাসিরা গবাদী পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অধিকাংশ বানভাসিদের ঘরের মজুদ খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছেন। অনেক পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। দিনক্ষন যত যাচ্ছে ততই বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
বন্যাকবলিতদের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় এবং বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অধিকাংশের পরিবারে কয়েক দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষেরা আক্ষেপ করে বলেন, আপনার মতো অনেকে এসে কথা বলে ছবি তুলে ভিডিও করে কিন্তু কেউ কিছু দিতে আসেনা। আমাদর কষ্ট কেউ বুঝেনা।
বাঁধের রাস্তায় চর গুজিমারি থেকে আশ্রয় নিতে আসা লাল ভানু (৬৫) বলেন, বাড়িতে বানের পানি দিয়ে ভরে গেছে। উপায় না পেয়ে অসুস্থ স্বামী সহ বাঁধের রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। কেউ সাহায্য করেনা। না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। আক্ষেপ করে জানান, টেহা নেই কিকরে অসুস্থ স্বামীর ঔষধ কিনি, কি দিয়ে খাবার কিনে খাই বলে কেঁদে উঠেন। তার পাশেই আশ্রয় নেয়া রত্না বেগম (৩৫) জানান, বাড়িতে বানের পানি উঠায় কোনোরকম দুইটা গরু নিয়ে বাঁধের রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। অনেক কষ্ট করে ১০ দিন থেকে চলছি। গবাদিপশুর অসুখ দেখা দিয়েছে চিকিৎসা করার টাকা নেই। কি করব উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নেয়া রহিম বাদশা (৩৫), আব্দুস ছামাদ (৭৫), পানফুল বেওয়া (৭০), গোলজার আলী (৮৫), ওমর আলী (৬৫) ও ফুলবাবু (৩৫) সহ আরও অনেকে বলেন, বানের পানি আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের বাড়িতে কমর পর্যন্ত পানি থাকায় নিরুপায় হয়ে বাঁধের রাস্তায় তাবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। আজ ১০ দিন যাবৎ এখানে অনেক কষ্ট করে আছি। কেউ সহযোগিতা করতে আসেনি। আমাদের দেখার কেউ নেই বলে জানান তারা।
উপজেলা ত্রাণ ও পূণবাসন কর্মকর্তা সিরাজুদৌল্লা জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত ৫৫ মে.টন চাল ও ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা পর্যায়ক্রমে বিতরন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, কয়েকদিন ধরে দূর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরন করা হচ্ছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।