প্রতিনিধি ১৮ আগস্ট ২০২৪ , ৬:০০:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর রাজা রামমোহন মার্কেটের সামনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা এবং পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির নিহতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। রবিবার (১৮ আগস্ট) রংপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজু আহামেদের আদালতে মামলাটি করা হয়।
ঢাকা গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনস্টিটিউটের অষ্টম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন নিহত শিক্ষার্থী তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি (ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ওসি মোন্তাসির বিল্লাহ, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছাদায়েত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রমানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নাসিমা জামান ববি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, সভাপতি জেলা যুবলীগ লক্ষণ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগ মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহামেদ, নাসিম আহামেদ ছুনু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শাহাজানুর ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাব্বির আহামেদ, সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মামুনসহ অজ্ঞাত ২০/৩০জন।
বাদী তার মামলার আর্জিতে জানান, ঢাকা গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইনস্টিটিউটের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। গত ১৯ জুলাই মিছিল নিয়ে সিটি বাজার সংলগ্ন রামমোহন মার্কেটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি নিহত তাহিরের পেটের মাঝ বরাবর ঢুকে ছিদ্র হয়ে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুলিশের এপিসি থেকে গুলিবর্ষণ করেন। শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ দেন। তার সহযোগী অন্য মন্ত্রীরাও হত্যার বিষয়ে উসকানি ও নির্দেশ দিয়েছে বলে বাদী উল্লেখ করেন।
শুনানি শেষে বিচারক মামলা এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য থানাকে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আসামিরা শিক্ষার্থী তাহিরকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রীসহ ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে নিহতের বাবা।
অপর আইনজীবী হারুনুর রশীদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনের নামে গণহত্যা চালানো হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার বিশেষ আদালতে করার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নিহত তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান জানান, তার ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি করে করা হয়েছে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে ফাঁসি দাবি করেন।