রংপুর

উলিপুরে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

  প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২৪ , ৩:৫৯:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বজরা ইউনিয়নের চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষার স্পার বাধ তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষার স্থাপিত স্পার বাঁধের একাংশ ধ্বসে গেছে। প্রায় ৭ বছর পূর্বে ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার চর বজরা এলাকায় স্পার বাঁধটি নির্মান করা হয়। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পশ্চিম দিকে অপরিকল্পিত ভাবে বেক্সিমকো গ্রুপের স্যোলার পাওয়ার প্লান নামে একটি স্থাপনা নির্মান করায় প্রতি বছর এ এলাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক বসতভিটা বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে তীব্র ভাঙ্গনে চর বজরা গ্রাম সহ পাঁচটি গ্রাম হুমকির মুখে। এসব এলাকায় বসতভিটা হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন পাড়ের মানুষ। সহায় সম্বল নদী গর্ভে হাড়িয়ে মাথা গোজারা ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। এসব এলাকায় তিস্তার তিব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধহারে দিনাপাত করছেন।

এদিকে বজরা ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে চর বজরা, জোলাপাড়া, বজরা মধ্যপাড়া, তারিপাড়া গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ সহ ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মসজিদ, বাধের রাস্তা, ১টি নুরানি মাদ্রাসা ও ১টি কবর স্থান হুমকির মুখে পড়েছে। এসব এলাকার হুমকির মুখে থাকা মানুষেরা জানান, আমরা ত্রাণ চাইনা আমরা চাই নদী সংস্কার। দিনে দিনে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তাদের দুঃখ দূর্দশা কেউ দেখেনা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় তা অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ে কর্তব্যরত শিক্ষকেরা। এছাড়া তিস্তা পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। তিস্তার ভাঙ্গনে শতশত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষের নতুন করে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন এসব এলাকায়। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে ও বাঁধের রাস্তায় ঘর উঠিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া তিস্তা নদীর ভাঙ্গন থেকে এই এলাকাটি রক্ষার্থে বাম তীরে পাউবো বাঁধটি নির্মানের পর নদীর পশ্চিম দিকে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর উপকুলে শত শত একর জমির উপর অপরিকল্পিত ভাবে বেক্সিমকো গ্রুপের একটি স্যোলার পাওয়ার প্লান স্থাপনা নির্মান করা হয়। অপরিকল্পিত ভাবে পাওয়ার প্লানটি নির্মানের ফলে প্রতি বছর এ এলাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই বাঁধটির কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। ভাঙ্গন রোধ না করা গেলে স্থানীয় ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি মসজিদ, ৫ টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক শত একর আবাদী জমিসহ ঘর-বাড়ি গাছপালা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বর্তমান আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছ ৯৫ জন। তিস্তার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়ায় অনেক শিক্ষার্থী কমে গেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নদীর পশ্চিম দিকে অপরিকল্পিত ভাবে বেক্সিমকো গ্রুপের স্যোলার পাওয়ার প্লান নামে একটি স্থাপনা নির্মান করায় প্রতি বছর এ এলাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক বসতভিটা বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় বিদ্যালয়টি অন্যেত্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া সমস্যা হয়ে যাবে।

চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার (৫ম শ্রেণী), বৃষ্টি আকতার (৪র্থ শ্রেণী) ও মুশফিক আলী (৩য় শ্রেণী) সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিদ্যালয় তিস্তার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা কোথায় পড়াশুনা করবো। এখন আমাদের বিদ্যালয় কোথায় নিয়ে যাবে কখন ক্লাস শুরু হবে আমরা ভেবে পাচ্ছিনা।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের স্যোলার পাওয়ার প্লানটি আমাদের জন্য মরনফাঁদ। এটির কারনে আমাদের এলাকায় নদী ভাঙ্গন বেড়েই চলছে। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধটির একাংশ তিস্তা নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এছাড়া বাঁধটি রক্ষার্থে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নার্গিস ফাতিমা তোকদার জানান, তিস্তার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা অন্যেত্রে সরানো হচ্ছে। এতে করে সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কিছুটা ব্যঘাত ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বাম তীর রক্ষায় স্পার বাঁধের অংশ ধ্বসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধ রক্ষায় সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বলেন, সেখানে আমাদের লোক পাঠিয়েছি। দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content