চট্টগ্রাম

আ’লীগ নেতা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ 

  প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৪ , ৭:২৫:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

আ'লীগ নেতা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ

আ’লীগের রাজনীতি করে হয়েছেন কৃষকলীগের নেতা, বনেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে প্রায়ই থাকতেন অনুপস্থিত। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে করতেন খারাপ ব্যবহার। স্কুলে ফান্ডের টাকা হিসাব নিকাশ নিজেই করে ভোগ করেন। শিক্ষকদের পদ উন্নতির নামে নিতেন ঘুষ।

নারী কেলেঙ্কারির সাথে ছিলেন জড়িত। এমন অভিযোগ ওঠেছে  কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম মাস্টার এর বিরুদ্ধে। আ’লীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিষাদ করে তুলেছেন স্কুলসহ পুরো এলাকা। সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, আসেন না কর্মস্হলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। 

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, ২০১১ সালে সে আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। সেই থেকে এ স্কুল ধ্বংসের পথে। নিয়মিত অফিসে আসেন না। রাজনৈতিক প্রগাম, মিটিং, মিছিলে পড়ে থাকতেন। পড়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিতেন ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। স্কুলের ফান্ডের হিসাব নিকাশ তার নিজের কাছে রাখতেন, নামে বেনামে বিভিন্ন কাজের কথা বলে সব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করার জন্য সকল শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়েছেন আট হাজার করে। টাকা নিয়েও করেননি কাজ। স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের কথা বলে করেছেন অর্থ আত্মসাৎ। 

কেউ কিছু বললে আমি আ’লীগ করি, আ’লীগের নেতারা কারও কাছে জবাবদিহি করে না। খুব বেশি হলে আওয়ামী সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি ধমকি দেওয়া ছিল যার বৈশিষ্ট্য। 

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর কাছে প্রধান শিক্ষক এর বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেন আমরা প্রায়ই স্যারকে স্কুলে আসতে দেখি না। হঠাৎ করে এসে আমাদের গালিগালাজ করত। মাঝে মধ্যে ক্লাসে ডুকে অধ্যায়নরত অবস্থায় শিক্ষকদের ধমক, বকাঝকা করত। আমাদের অভিভাবকদের কোন বিষয়ে বিদ্যালয়ে এসে জানতে বা অনুরোধ করতে মানা করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা অভিভাবক সন্তানের বেতন ফ্রি করার জন্য অনুরোধ করতে আসলে ওনার মুখের উপর বলেন এত বাচ্চা জন্মদেন কেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে জানালে তাদেরকেও আওয়ামী সন্ত্রাসী দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে।

সংবাদকর্মী দেখে বিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষক এসে কেঁদে কেঁদে বলেন, জীবনের পুরাটা সময় এ বিদ্যালয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। সবাই সম্মান করেছে, কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে একাধিকবার অপমান করেছেন। বলতেন আমি নাকি গাদা, মানুষের বেশ ধরে আছি, অকর্মা ইত্যাদি ভাষা ব্যবহার করত।

বিদ্যালয়ের একাধিক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্হানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বললে  তারা বলেন, সে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। স্হানীয় জনপ্রতিনিধির প্রভাবে মানুষকে মানুষ মনে করত না। বিদ্যালয়ে নিয়মিত অফিস করত না। আমরা বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্হা নিতে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী দিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিত। ২০২৩ সালে সে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং  অবরোধে পরে। সকলে তার অপসারণ দাবী করে। কিন্তু সেইবারও সে আওয়ামী লীগের প্রভাবে স্কুল সপদে বহাল থাকে। এখানেই শেষ নয় নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সেলিম মাস্টার কমপক্ষে ৩-৪ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। এ বিষয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কোন ব্যবস্হা নেয়নি।

ফের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর, ৬ আগস্ট থেকে বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলেও এখনো হাজির হননি। অনেকে ধারণা করে বলেন, সরকারের সাথে সেও এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। না হয় কোথাও আত্নগোপনে রয়েছে। 

এ বিষয়ে বাঙ্গুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মাস্টার বলেন, সরকার পতনের পর থেকে আমি আমার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছি। শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছি। কর্মস্হলে কবে নাগাদ উপস্থিত হবেন জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না। 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, দেবিদ্বার আমি নতুন এসেছি, এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ঘটনা জেনেছি, তদন্ত সাপেক্ষে খুব দ্রুত ব্যবস্হা গ্রহণ করবো।

আরও খবর

Sponsered content