প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:৫০:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
এহেন কোনো দুর্নীতি নাই যা করেননি বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাশক্তিধর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) নূর আনোয়ার হোসেন। ভুয়া অনুষ্ঠান শিডিউল বানিয়ে ভুয়া বিলে অর্থ লোপাট, বিধি বহির্ভূত নিয়োগ বাণিজ্য, উপকরণ কেনাকাটায় দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য সবই করেছেন বিগত সরকারের আশির্বাদপুষ্ট এ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দৈনিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লোপাট করার অভিযোগ মিলেছে নুরের বিরুদ্ধে।
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের আশির্বাদে ধরাকে সরাজ্ঞান করেন নাই নুর। আইন বা নিয়ম নয়, নুরের কথাতেই চলত বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সকল কার্যক্রম। প্রযোজক ইয়াদ আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিথি প্রযোজক সাখাওয়াত হোসেন মিঠু এবং বৈদ্যনাথ অধিকারীর সমন্বয়ে একটি নিজের সিন্ডিকেট বা বলয় তৈরী করে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে লুটেপুটে খেয়েছেন নুর গং।
জানা গেছে, জিএম নূর আনোয়ার হোসেন ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি বিটিভিতে অডিয়েন্স রিসার্চ অফিসার/স্ক্রিপ্ট অ্যান্ড মনিটরিং এডিটর (গ্রেড-২) হিসেবে যোগ দেন। ২০০৯ সালের ৪ জুন এইচ টি ইমামের লিখিত সুপারিশে ৯ জুন তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে স্থায়ী পদ প্রযোজক ( গ্রেড-২) পদায়ন করে বিটিভি। পরে রাজনৈতিক প্রভাবে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারী প্রযোজক (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি; একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে নির্বাহী প্রযোজক এবং ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কন্ট্রোলার/ প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারী নূর আনোয়ার হোসেনকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম হিসেবে পদায়ন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রীর আশীর্বাদে অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠা নুরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। ফলে নির্বিঘ্নেই তিনি চালিয়ে গেছেন তার অপরাধ দুর্নীতি, অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা। অতিথি প্রযোজকদের স্বাক্ষর করার ক্ষমতা না থাকার পরও নিজেরা বিল বানিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অনুষ্ঠানগুলোতে যাদের নামে চেক দেখানো হয়েছে, এরা প্রকৃতপক্ষে অংশগ্রহণকারী নয়, জিএমের বানানো লোক। জিএম তার লোকদের নামে এসব চেক দিয়ে নিজেরাই উত্তোলন করে প্রতিনিয়ত আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে জিএম নুরের অনিয়মের বিরুদ্ধে ১৪ জন কর্মকর্তা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পদায়ন এবং পদোন্নতি বাতিলের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেন, যা গত ৯ এপ্রিল বিটিভির মহাপরিচালকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই কমিটি গত রবিবার অভিযোগকারী ১৪ কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সুপারিশের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়নের সিনিয়র সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, জিএমকে প্রত্যাহারের সিন্ধান্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সত্যতা যাচাই করছে তদন্ত কমিটি। আগামী সপ্তাহ নাগাদ তদন্ত প্রতিবেনদ পাব বলে আশা করছি।
সূত্র জানায়, জিএম নুর আনোয়ারের বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালককে (প্রশাসন) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে শারীরিক নির্যাতনসহ জীবনের হুমকির বিষয় তুলে ধরে জিডির অনুমতি চেয়ে মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো. আতাউর রহমান। জিএম নূর আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।