প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ৬:২৯:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দোহাজারী পৌরসভায় জমে উঠেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুণ সহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চারা বেচা-কেনা। ক্রেতাদের মধ্যে কেউ জমিতে কেউ আবার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করতে কিনছেন এসব চারা। অন্য সময়ের চেয়ে শীতের মৌসুমে এসব সবজির চারার দাম ভালো পাচ্ছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের অধিকাংশই নিজেদের জমিতে এসব চারা উৎপান করে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শঙ্খনদ তীরবর্তী চরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পুরো বছর জুড়েই সবজি চাষ হয়।
দোহাজারী পৌরসভা এলাকায় হাজারী শপিং সেন্টারের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার জমে উঠে বিভিন্ন সবজির চারা বিক্রি। এখানে চন্দনাইশ উপজেলার পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ থেকে ১৫ জন বিক্রেতা তাদের জমিতে উৎপাদন করা চারা এনে বিক্রি করেন। এসব চারা বিক্রেতারা শীতকে উপলক্ষে করে তাদের নার্সারিতে এই সবজির চারা উৎপাদন করেন। কারণ শীতের সময়ে সবজির চারার কদর এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। বর্তমানে ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, লাউ ও কুমড়া চারা। এসব চারার মূল্য প্রকারভেদে ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ৯নং ওয়ার্ড থেকে আসা সবজির চারা বিক্রেতা ওমর আলী জানান, গত ১৫ বছর ধরে তার নিজ বাড়ির পাশে ৩০ শতাংশ জমিতে চারা উৎপাদন করেন তিনি। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার দোহাজারী বাজারে, রবি ও বুধবার কেরানিহাট বাজারে সবজির চারা বিক্রি করতে নেই। মূলত লক্ষ্য থাকে প্রতিবছরের শীতের মৌসুমে এসব চারা বিক্রি করার। কারণ এই মৌসুমে বাজারে চারার চাহিদা এবং দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই শীতের এই মৌসুমে চারা নিয়ে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে যাই। এছাড়া অনেক চাষী বাড়িতে গিয়েও চারা সংগ্রহ করেন। বর্তমানে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারা প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, মরিচ ও টমেটো চারা প্রতি পিস ২ থেকে ৪ টাকা, বেগুন চারা ৪ থেকে ৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে কখনো ৫ হাজার, কখনো ১০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করতে পারি। যেখান থেকে খরচ বাদে হাটপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হয়।
সবজির চারা বিক্রি করতে আসা আরেক বিক্রেতা সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইশ ইউনিয়নের চরতী এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন জানান, নিজ বাড়ির আঙিনায় ২৪ শতাংশ জমিতে গত ১৫ বছর ধরে সবজির চারা উৎপাদন করছি। কেরানিহাট, বোমাংহাট, দোহাজারী সহ বিভিন্ন বাজারে এসব চারা বিক্রি করতে নেই। অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীতের মৌসুমে বাজারে সবজির চারার অনেক কদর থাকে। এ সময় চারার দামও ভালো পাওয়া যায়। যার জন্য শীতকে সামনে রেখে প্রতিবছর চারা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিই। এবছরও শীতে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদন করেছি। এখন প্রতি হাট-বাজারে নিয়ে এই চারা বিক্রি করছি। ক্রেতারা এসে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী চারা কিনে নেন। প্রতি হাটে এসব চারা বিক্রি করে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। এতেই আমি খুশি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈকত বড়ুয়া বলেন, শঙ্খ চরের অনেক সবজি চাষী নিজেরা চারা উৎপাদন করে নিজেদের জমিতে রোপণ করেন। অনেক চাষী বাজার থেকে চারা কিনে এনে রোপণ করেন। শীতের সময়ে শাক-সবজির চাহিদা অনেকটা বেশি থাকে। যার জন্য উপজেলার অনেক এলাকায় নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এসব নার্সারি মালিকদের আমরা নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, যাতে করে তারা সঠিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের চারা উৎপাদন করতে পারেন। এছাড়াও এসব নার্সারি মালিকদের যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি।