দেশজুড়ে

বিলুপ্তির পথে ভোলার ধর্মজাল 

  প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২৪ , ৬:৩৯:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে ভোলার ধর্মজাল 

দ্বীপ জেলা ভোলার চারপাশে নদ-নদী, এ নদী থেকে সংযুক্ত বিভিন্ন খাল। এসব খালে ভেসাল জাল (ধর্মজাল) দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যটি সবার চিরচেনা। তবে সময়ের পালাবদলে এ ভেসাল জালে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন খুব বেশি চোখে পড়ে না। 

গ্রামগঞ্জের খাল-বিল, ও ডুবায় বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জেলেদের ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যেত একসময়।

ভেসালে ঝাঁক বেঁধে উঠতো রুই, কাতলা, পুঁটি, বাইলা, টেংরা, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ। 

ভেসালভর্তি মাছ দেখে জেলেরা খুশিতে আত্নহারা হয়ে যেতেন। সময়ের বির্বতনে সেই ঐতিহ্যবাহী ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। বলা চলে ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এরপরও গ্রামের কিছু জায়গায় মাঝে মধ্যে ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।

ভেসাল জাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন জেলে খুব সহজে মাছ শিকার করতে পারেন। এর থলি বেশ বড়। জালের সামনের প্রান্ত খাল বা বিলের পানির গভীর ছুঁয়ে মাছকে থলিতে বন্দি করে। তখন জেলে দুই হাত দিয়ে জালে ঢুকে পড়া মাছগুলোকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারেন।

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকার করলেও নদীভাঙ্গন ও খাল ভরাট করায়  ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ভেসাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন ধনিয়া কানাইনগর এলাকার মতলব মাঝি। মাছ এখন কম পেলেও পুরানো অভ্যাস কোনোমতেই ছাড়তে পারছেন না। 

বর্ষার শুরুতে খালে পানি এলেই তিনি ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা শুরু করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে ভেসালে মাছ ধরা শুরু করেন দুপুরের দিকে এক থেকে দুই ঘণ্টা বিরতি রাখেন। তারপর একটানা রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত চলে মাছ ধরা। ভেসালে ওঠা মাছ আশেপাশের হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। স্থানীয় লোকজনও ভেসালের কাছে গিয়ে তরতাজা মাছ কিনে নেয়।

এখন শীত মৌসুমে খাল-বিলে পানি কম হওয়ায় মাছের উৎপাদন কমে গেছে। ভেসাল স্থায়ীভাবে তৈরি করার জন্য জেলেকে কয়েক হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। জাল কেনা, ভেসাল তৈরি করার জন্য বড় বড় বাঁশ, রশি ও নৌকা কিনতে হয়।

গ্রামে এখন আর আগের মতো বড় বাঁশ দেখা যায় না। গ্রামাঞ্চলের খাল-বিলে খুব কম দেখা যায় ভেসাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য। তবে বর্ষার সময় জেলেরা কেবল এ ভেসাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন। শুঙ্ক মৌসুমে খাল-বিলে পানি না থাকায় এ ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা মাহাজনপোল এলাকার সেরু মাঝি জানান, খাল সরু হয়ে যাওয়া, নাব্য সংকট, খালে জোয়ারের পানি না আসায় মাছ কমে গেছে। তাই জেলেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন খাল থেকে মাছ ধরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভেসাল জাল।

 ইলিশা পাকার মাথার বাসিন্দা বজলু চকিদার বলেন, এখন তো খাল বন্ধ করে মানুষ ব্রীজ করে। প্রতি বাড়ীর সামনে ব্রীজ, আবার অনেকে অবৈধ ভাবে খাল ভরাট করে ফেলে তাই খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ ও আসে না, জাল ও বসানো হয় না৷ 

জেলে গৌতম বিশ্বাস বলেন, এখন থেকে ২০-২৫ বছর আগেও প্রায় সারা বছরই ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। এখন খাল-বিলে পানিও তেমন হয় না, ভেসালে মাছও ওঠে না। শীত আসার আগ থেকেই খালে পানি থাকে না। বর্ষার দুই-তিন মাস শুধু ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা যায়।বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছে বলে তিনি জানান।

এক সময় সারা বছরই দেখা যেতো বিভিন্ন এলাকার খালে ভেসালজাল পেতে চলছে মাছ ধরা। নানা বয়সী মানুষ এই জাল দিয়ে মাছ ধরতেন। বর্ষাকাল ছিল মাছ ধরার ভরা মৌসুম। তবে এখন আর সেই দিন নেই। বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন দেখাই মেলে না এই জালের।

আরও খবর

Sponsered content