প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:০০:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডের আভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে নেই সড়ক বাতি। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় একপ্রকার ভূতুরে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সড়কগুলোতে বৈদ্যুতিক আলোর কোন সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে অন্ধকারে চলাফেলা করতে জনসাধারণকে অনেক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। পৌরসভার নাগরিকরা রাতের বেলায়ও যাতে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারেন সেজন্য আভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বাতি স্থাপন জরুরি হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে সম্পূর্ণ নির্বিকার।
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উপশহর হিসেবে পরিচিত দোহাজারী ইউনিয়নকে ২০১৭ সালে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে দোহাজারী পৌরসভার তৎকালীন প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম বদরুদ্দোজা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আলোকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ওই বছর পৌরসভার রাজস্ব তহবিলের অর্থায়নে ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬শত ৮৯ টাকা ব্যয়ে দোহাজারী পৌরসভার আভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কে ১২টি মিটার বোর্ডের আওতায় ৫২০টি সড়ক বাতি স্থাপন করা হলেও অধিকাংশ সড়কে অদ্যাবধি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভা এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুকুরভাঙা থেকে জুঁইপাড়া পর্যন্ত সড়ক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরু সড়ক, নতুন রেল ষ্টেশন হইতে ডাক বাংলা (বার্মা কলোনী) সড়ক, গ্রীন হাসপাতাল থেকে স্বর্গীয় ভগিরত সিংহ হাজারী সড়ক এর লোকনাথ সেবাশ্রম ভায়া লেদু চেয়ারম্যান বাড়ী এবং বেগ বাড়ী সংযোগ সড়ক এবং সালাম কোম্পানীর বাড়ী হইতে চাগাচর বারুদখানা সংযোগ সড়ক, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রায়জোয়ারা ইসলামিয়া নজিরিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে লালুটিয়া ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত সড়ক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামিজুরী সৎসঙ্গ আশ্রম হইতে শ্রীকৃষ্ণ গীতা আশ্রম পর্যন্ত সড়কগুলো রাতের বেলা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্য রাত হতেই এসব সড়কে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। এলাকাবাসী নিজেদের বাড়িতে যে বাতি জ্বালিয়ে রাখছেন, সেই আলোতে রাস্তার কিছু অংশ চলা গেলেও বেশির ভাগ রাস্তাই অন্ধকার থাকে। এতে বিপাকে পড়েন ওই সব এলাকায় চলাচল করা পথচারী ও যানবাহন চালকরা।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের রায়জোয়ারা এলাকার বাসিন্দা হাইচ চালক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা পৌরসভা এলাকায় বসবাস করি। নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করি। কিন্তু ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মতো অন্ধকারে থাকি। আমাদের এলাকায় নগরায়ণের ছোঁয়া লাগেনি। জনবহুল ও ব্যস্ততম সড়ক হওয়া সত্ত্বেও এই এলাকায় সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়নি। গত বছর মে মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করার পর বার বার আশ্বাস দিলেও অদ্যাবধি সড়ক বাতি স্থাপন হয়নি।
তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন বলেন, গভীর রাতে দোকানপাটের আলো নিভে গেলে কিংবা যান চলাচল কমে গেলে রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উৎপাতের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া অন্ধকারে হোঁচট খাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটে। নির্বিঘ্নে চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক বাতি স্থাপন অতীব জরুরি।
৮নং ওয়ার্ডের জামিজুরী হিন্দুপাড়া এলাকার প্রদীপ কান্তি দাশ বলেন, জামিজুরী সৎসঙ্গ আশ্রম হইতে শ্রীকৃষ্ণ গীতা আশ্রম পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে
মন্দিরের পূজারি থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের রাত দিন চলাচল রয়েছে। রাতের বেলায় সড়কটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা রাত করে বাড়ী ফেরার সময় চোর, ডাকাতের হাতে পড়ে সর্বহারা হতে হয়। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সড়ক বাতি স্থাপন একান্ত জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
২নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাঃ শাহ্ আলম বলেন, ২নম্বর ওয়ার্ড হলো পৌরসভার সদর। ওয়ার্ডটিতে ১৪টি সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক, বীমা, পোষ্ট অফিস, খাদ্য গুদাম, ঐতিহ্যবাহী রেলষ্টেশন সংযোগ সড়ক, দৃষ্টি নন্দন দুইটি শংঙ্খব্রীজ ও মহাসড়ক। স্বনামধন্য সুপার মার্কেট সহ প্রায় দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এই ওয়ার্ডে। পৌর শহর হিসেবে ওয়ার্ডটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বাতি স্থাপন করা হয় নাই। তাই বৈদ্যুতিক আলোর অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ তথা যে কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন কেউ অপকর্ম করে বসে। রাস্তায় আলো থাকলে মানুষ অন্তত ভয় করত না বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে দোহাজারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম উদ্দিন বলেন, “সড়ক বাতি সেবা পৌরসভার চলমান উন্নয়নমূলক কাজেরই একটি অংশ। পৌরসভার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ধাপে ধাপে প্রধান সড়কগুলোকে সড়ক বাতির সেবার আওতায় আনা হচ্ছে এবং এ কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যমান ৫২০ টি বাতির মধ্যে যেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো গত অর্থ বছরে প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত ও পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। যেসকল এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এখনো বাতি স্থাপন করা হয়নি পর্যায়ক্রমে সেখানে সড়ক বাতি স্থাপনের মাধ্যমে আলোকিত করণের জন্য পৌর প্রশাসকের নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডিপ্লোমেসি চাকমা বলেন, “দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে আড়াইমাস হলো। জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে বাতি না থাকায় মানুষের দুর্ভোগের কথা আমি জেনেছি। ইতিমধ্যে পৌরসভার বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলীকে এসেসমেন্ট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসমস্ত সড়কে বাতি নেই সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্য সড়কবাতি লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে।”