রংপুর

জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিকবাংলাদেশ গড়তে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান

  প্রতিনিধি ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ , ৪:০৫:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিকবাংলাদেশ গড়তে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান মানবিক বাংলাদেশ গড়ার উপর গুরুত্বারোপ বলেছেন, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন কোন কার্যক্রম থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। আর মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আল্লাহর নির্দেশনা অর্থাৎ কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

৫৪ বছরে অনেক সরকার দেশ শাসন করেছে। হাত বদল হয়েছে। কিন্তু দেশে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তা একমাত্র কারন আল্লাহর নির্দেশনা মানা হয়নি। ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ শনিবার দিনাজপুর গোর এ শহিদ বড় ময়দানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি ২৪ জুলাইয়ের ছাত্র জনতার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে আমাদের ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়েছে। এ দেশের মাটিকে রক্তে রঞ্জিত করে ফ্যাসিস্ট প্রধান শেখ হাসিনা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। নিহত ও আহত এসব ছাত্র-জনতা যেন কষ্ট না পায়,তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জামায়াতের ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে, তার মধ্যে ৫জনকে ফাঁসি দিয়ে ও ৬জনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে এবং জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের খুন ও গুম করে এবং জেলে পুড়িয়ে জামায়াত ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। দেশের প্রতিটি জামায়াত শিবির কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে এদেশে জামায়াত শিবির প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলন করছে এবং জনগনের সাথে আছে। আওয়ামীলীগ প্রধানসহ সকল নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা বুক পেতে রক্ত দিয়ে সে রক্ত বৃথা হতে দেয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, শাপলা চত্বরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শাপলা চত্বর। অথচ নির্লজ্জ ফ্যাসিবাধী সরকার ঘোষনা দিলেন হেফাজত রাস্তায় রং ছিটিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা লোহার বদলে বাশ, সিমেন্টের বদলে ছাই দিয়ে উন্নয়নের ধোয়াতুলে ২৬ লাখ কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে।

তিনি বলেন, এত খুন, জেল জুলুম অত্যাচারের পরও জামায়াতে ইসলাম ও শিবির বসে থাকেনি। যেখানেই দুর্ভিক্ষ, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেখানেই জামায়াতে ইসলাম মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও অত্যাচার ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে।

তিনি কুড়িগ্রাম রৌমারী ও গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জে দুটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যা কিছু হচ্ছে সব দোষ জামায়াত-শিবিরের। তিনি দিনাজপুরের একজন বিচারকের নাম উল্লেখ না করে বলেন, প্রকাশ্যে এই বিচারক ঘোষনা দিয়েছিলেন আমরা শব্দ বদ্ধ রাজনীতিবীধ। এই বিচারক পক্ষপাত দুষ্ট, শপথ ভঙ্গ করেছেন। যার ফলে আমরা আদালতে কোন বিচার পাইনি। তিনি এই বিচারকের ফৌজদারী আইনে মামলা দাবী জানান।

তিনি ফ্যসিস্টদের বাংলার মাটিতে আশ্রয় প্রশ্রয় হবে না উল্লেখ করে আরও বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সকল হত্যার বিচার চান জামায়াত ইসলামী। চুরি,চামারি না করি, চাঁদাবাজী না করি, দখল বাণিজ্য না করি, ঘুষের ভাগ না বসাই, মামলা বানিজ্য না করি তাহলেই ফ্যাসিদের কবর রচিত হবে এদেশেই। তিনি সকল চাঁদাবাজ, জমি দখলকারী, মামলা বানিজ্য কারিদেরও বিচার দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, যাদের মধ্যে দেশ প্রেম আছে তারা এব কাজ থেকে বিরত থাকবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী সরকার গ্রহন করলে ঘুষ, দুর্নীতি, দখল বাজী বন্ধ করে দেয়া হবে। মহিলাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেয়া হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন কোন দলের ও কোন ধর্মের তা বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। আইন আইনের গতিতে চলবে। সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে। এর পুর্বে ১১ টা ১০ মিনিটে ৫ আগস্ট আন্দোলনে নিহত ছাত্র রুদ্র সেনের পিতা অধ্যাপক সুবীর কুমার সেন কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর জেলা শাখার আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী ড. এনামুল হক ও সহকারী সেক্রেটারী রাজিবুর রহমান পলাশের সঞ্চালনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুর হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দোলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, বিরামপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশির কুমার সরকার, জেলার সাবেক আমীর আনোয়ারুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আবতাফ উদ্দীন মোল্লা, মাহবুবুর রহমান ভুট্টু, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, শহর আমীর সেরাজুস সালেহীন, শিবিরের সাবেক ছাত্র নেতা মতিউর রহমান, নিতাই চন্দ্র দেবনাথ, ঠাকুরগাও জেলার সাবেক আমীর অধ্যক্ষ আব্দুর হাকিম, ঠাকুরগাঁও জেলার বর্তমান আমীর বেলাল উদ্দীন প্রধান, পঞ্চগড় জেলার আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, কেন্দ্রীয় শিবির নেতা মুসফিকুর রহমান, হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা জোবায়ের সাঈদ, খেলাফত মজলিসের সভাপতি রেজাউল করিম,দক্ষিণ ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু , উত্তরের সভাপতি রাসেল রানা প্রমুখ।

অন্যান্য বক্তারা ৫ আগষ্টের পর চাঁদাবাজী, লুন্ঠন, জমি দখল ও মামলা বানিজ্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। উল্লেখ, প্রায় ২০ বছর পর জামায়াতের ইসলাম প্রকাশ্যে দিনাজপুরের গোর এ শহিদ বড় ময়দানে বিশাল কর্মী সম্মেলন করলেন। মহিলা ও পুরুষ সহ প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ কর্মী সম্মেলনে জমায়েত হন।

আরও খবর

Sponsered content