বরিশাল

উপকারভোগীদের থেকে টাকা নিলো কারা?

  প্রতিনিধি ২৬ জানুয়ারি ২০২১ , ২:৩৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে এই ঘর উপহার দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। শনিবার প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে তাদের আশ্রয় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে বারান্দা, রান্নাঘর, শৌচাগারসহ দুই কক্ষের ঘর।যারা আশ্রয় পেয়েছেন তাদের অনেকের স্বপ্নেও ছিল না এমন পাকা বাড়িতে থাকার।তবে এই প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যের অভিযোগও পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অসাধুদের মাধ্যমে অর্থ নেয়া হয়েছে উপকারভোগীদের কাছ থেকে। কোথাও কোথাও নেয়া হয়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। আবার কোথাও মালামালের ভাড়ার কথা বলে নেয়া হয়েছে অর্থ। এমন বেশকিছু অভিযোগের সরাসরি তথ্য দিয়েছেন উপকারভোগীরা।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ভূমিহীন ও গৃহহীদের ঘর নির্মাণের জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ থেকে ৪৯১টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫০টি ঘরের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঘর তৈরিতে শর্ত রয়েছে সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে থাকতে হবে দুইটি বেডরুম, ১টি বাথরুম, বারান্দা এবং উপরে উন্নতমানের রঙিন টিন। যার জন্য ঘরপ্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।

তবে এসব ঘর বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও চরমোন্তাজ ইউনিয়নে ঘটেছে ভিন্নতা। উত্তর চরমোন্তাজ ৬নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর ফরাজী বলেন, ঘর পেতে আমাকে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যের স্বামী জলিল হাওলাদারের কাছে প্রথমে ২০ হাজার ও পরে মালামালের ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু তারা ঘর নির্মাণের জন্য যে নির্মাণ সামগ্রী দিয়েছে তার পরও আমাকে ২৪ হাজার টাকার নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হয়েছে। ইট ২ হাজার, রড ১৩ কেজি, সিমেন্ট ৩০ ব্যাগ নিজের টাকায় কিনেছি। একই অভিযোগ করেন এ ওয়ার্ডের মাহাবুব হাওলাদারও।

চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হালিম খান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া আমার মাধ্যমে ৩টা ঘরের নাম দিয়েছেন, প্রতিটি ঘরের জন্য তাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এমনকি আমার আপন ভাইয়ের জন্য ঘরের নাম দিতে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।  এ ব্যাপারে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু হাওলাদার ভোরের দর্পণকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষ এসব অভিযোগ ছড়িয়েছে। এ অভিযোগ সত্য নয়। ৩নং ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল মান্নান  জানান, ঘরের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া মানবজমিনকে জানান, ইউপি সদস্যরা টাকা নিয়ে থাকলে নিয়েছে। আমাকে কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি। কেউ আমার কাছে অভিযোগও করেনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাশফাকুর রহমান  বলেন, ঘরের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে করা হয়েছে। অনিয়ম হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি টাকা দিয়ে থাকে সে তো আরো বড় অন্যায় করেছে। আগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী  জানান, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামছুন্নাহার শিউলী জানান, প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দুই একটি জায়গায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়ায় সেগুলো ঠিক করা হয়েছে।

ভোরের দর্পণ/এমএ

আরও খবর

Sponsered content