আন্তর্জাতিক

জনশূন্য কাবুলে বন্ধ দোকান-পাট, পালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী

  প্রতিনিধি ১৬ আগস্ট ২০২১ , ৬:২৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

কোনও ধরনের লড়াই ছাড়া তালেবানের বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানের রাজধানী দখলের নেওয়ার পরদিন সোমবার সকালে কাবুলের রাস্তা ছিল অনেকটা জনমানবশূন্য, দোকান-পাট ছিল বন্ধ, পালিয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। তবে দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বিমানবন্দরে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিমানের ডানায় চড়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টার সময় চলন্ত বিমান থেকে তিনজনকে মাটিতে আছড়ে পড়তে দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের টার্মিনালের নিরাপত্তা বেষ্টনীর দিকে শত শত মানুষ লাগেজ নিয়ে ছুটছেন। এ সময় গোলাগুলির শব্দও শোনা যায়। বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের হুড়োহুড়িতে অন্তত পাঁচ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে তারা পদদলিত হয়ে নাকি গুলিতে মারা গেছেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মার্কিন সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। বিমানবন্দরের টারমাকে রাখা একটি বিমানে ওঠার জন্য শত শত আফগান ছুটতে শুরু করায় মার্কিন সৈন্যরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশৃঙ্খলা নিরসনের জন্য ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে।’ কাবুলের পার্শ্ববর্তী কূটনীতিক অধ্যুষিত উজির আকবর খান জেলার প্রায় সব কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারকে শহর থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেকেই বিমানবন্দরে বিমানের অপেক্ষা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, সোমবার সরকারি বিভিন্ন অফিস জনশূন্য ছিল। সাধারণত যেসব এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যেত, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অল্প কিছু সদস্যকে দেখা গেছে। কাবুলের সড়কে তল্লাশি চৌকিগুলোর বেষ্টনী নিজেরাই সরিয়ে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন চালাতে গেছে সাধারণ মানুষকে।

উজির আকবর খান জেলায় নিজের নান রুটির দোকানে বসা গুল মোহাম্মদ হাকিম বলেন, এখানে বসে শূন্য রাস্তা দেখতে অদ্ভুত লাগছে, দূতাবাসের ব্যস্ত গাড়িবহর, বন্দুক বসানো বড় বড় গাড়িও নেই।

তিনি বলেন, আমি এখানে রুটি বানাচ্ছি। কিন্তু আয় খুবই সামান্য হবে। যে নিরাপত্তা রক্ষীরা আমার বন্ধু ছিলেন, তারাও চলে গেছেন। সকাল পর্যন্ত কোনও গ্রাহক পাননি তিনি। তবে গ্রাহকের আশায় তন্দুর রুটি বানানোর চুলা জ্বালিয়ে রেখেছেন তিনি।

হাকিম বলেন, আমার প্রথম উদ্বেগ হলো আমার দাড়ি কতদ্রুত বাড়ানো যায়। আমার স্ত্রী এবং কন্যাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বুরকা আছে কিনা সেটিও দেখছি।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শাসনের সময় আফগানিস্তানে পুরুষদের দাড়ি কাটার অনুমতি ছিল না। নারীদের জনসম্মুখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখার বুরকা পরিধান করতে হতো।

শহরের চিকেন স্ট্রিটের বেশ কিছু আফগান কার্পেট, হস্তশিল্প ও অলঙ্কারের দোকানের পাশাপাশি ছোট ছোট ক্যাফে বন্ধ দেখা গেছে। কার্পেট এবং তৈরি পোষাকের দোকানের মালিক শেরজাদ করিম স্তানিকজাই বলেন, মালপত্র রক্ষার জন্য দোকানের শাটার ফেলে ভেতরে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, আমি একেবারে মর্মাহত অবস্থায় আছি। তালেবান শহরে ঢুকে পড়ায় আমি আতঙ্কিত। তবে আমাদের এই অবস্থায় ফেলে রেখে (প্রেসিডেন্ট আশরাফ) গনির চলে যাওয়াটা সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। এই যুদ্ধের সাত বছরে আমার তিন ভাইকে হারিয়েছি। এখন আমার ব্যবসা রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেছেন, গ্রাহক কোথায় থেকে আসবে সেবিষয়ে তার কোনও ধারণা নেই। আমি জানি, কোনও বিদেশি এখানে নেই। কোনও বিদেশি এখন আর কাবুলে আসবে না।

তালেবানের একজন নেতা বলেছেন, আফগানদের দৈনন্দিনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে দিতে এবং বেসামরিকদের আতঙ্কিত না করতে যোদ্ধাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্সকে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি বলেন, আরও ভালোভাবে স্বাভাবিক জীবনের শুরু হবে। আমি আপাতত এটুকু বলতে পারি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by