চট্টগ্রাম

ভূয়া অভিজ্ঞতায় সওজ’র কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা

  প্রতিনিধি ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ৬:৪৭:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজ ভাগিয়ে নিতে ই-জিপিতে ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ (কার্যসম্পাদন) সাবমিট করার অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবিদ মুনসুর কন্সট্রাকশন নামে এই টেন্ডার সাবমিট করা হয়। যেখানে টেন্ডারের শর্ত মানতে যুক্ত করা হয় নানা ভুয়া কাগজপত্র। এর আগেও অন্যান্য এলাকায় ভূয়া সনদের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানালয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রবিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এর আগে লক্ষ্মীপুর সওজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মেসার্স নাহার এন্টারপ্রাইজের মালিক কৌশিক আহমেদ। একই পত্রে অভিযুক্ত ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পূর্বের জালিয়াতির নানা সত্যতার কপিও সংযুক্তিতে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা যায়, ‘আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’ কুড়িগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে বড় প্রকল্প হাতিয়ে নিতে সাতক্ষীরা জেলার ভূয়া কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। পরে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ার্ক কমপ্লিশন সার্টিফিকেট এর সত্যতা যাচাই করেন। এসংক্রান্ত কুড়িগ্রাম ও কক্সবাজারের সড়ক বিভাগে পৃথক দুটি চিঠি দেন তিনি। এতে দুটি জেলার সড়ক বিভাগ থেকে কাজ হাতিয়ে নিতে দরপত্রের সাথে দেওয়া অভিজ্ঞতা সনদ যাচাই করে তা ভূয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাতক্ষীরা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ এর স্বাক্ষরিত এক পত্রে তা ভূয়া উল্লেখ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে এবং প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন ওই পত্রে। একই অভিযোগ করেন বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকোশলী ফরিদ উদ্দিন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রতারনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের নুরুল ইসলাম সিদ্দিক ও বরিশালের বটতলা এলাকার কাশেম আলী হাওলাদার নামের দুই ব্যক্তি ওই কনস্ট্রাকশন কোম্পানীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ বছর ধরে ভূয়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে কাজ পাওয়ার আর্থিক দূর্নীতি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রনালয় থেকে তদন্তের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়। যা ১৮ অক্টোবর থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সওজের প্রধান প্রকৌশলীকে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন সহকারি সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন।
গেলো ২৬ অক্টোবর সড়ক ভবনের প্রকিউরমেন্ট সার্কেলের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ সকল অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে চিঠি ইস্যু করেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন এখনো কোন আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা যায়। উল্টো নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আহবানকৃত বড় প্রকল্পের কাজ পেতে একইভাবে ভূয়া অভিজ্ঞতার সনদ সংযুক্ত করে টেন্ডারে অংশ নেয় আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’। যার আইডি এবং প্যাকেজ নাম্বার হলো- ঞবহফবৎ ওউ—৭৪০৩৮৩ (বএচ-০২/ঙঞগ/খজউ/চগচ-গরহড়ৎ/২০২২-২০২৩), ঞবহফবৎ ওউ—৭৪০৩৮২ (বএচ-০১/ঙঞগ/খজউ/চগচ-সরহড়ৎ/২০২২-২০২৩) এবং ঞবহফবৎ ওউ—৭৪০৩৮৪ (বএচ-০৩/ঙঞগ/খজউ/চগচ-সরহড়ৎ/২০২২-২০২৩)।
তবে অভিযোগ পাওয়ার পরেও নিয়ম অনুযায়ী ওই অভিজ্ঞতা সনদগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই করেনি লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগ। এমন প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগ সাজশে এ অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ঠিকাদারের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদাররা জানায়, সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতারনার মাধ্যমে কাজ পেতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেখিয়ে বড় কাজ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অন্য ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভও বিরাজ করছে এখন।
এ বিষয়ে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের কারো বক্তব্য জানা যায়নি।
এব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে তার মুঠোফোনে ও কার্যালয়ে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
এদিকে টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সড়ক বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ জানান, অভিযোগগুলো সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন । তবে এখনো পর্যন্ত তার (আবিদ মুনসুর কন্সট্রাকশন) বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই ওই প্রতিষ্ঠানকে এখনো অযোগ্য বলা যাচ্ছেনা।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content