প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:১৫:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে পাইকগাছা উপজেলার এক মাত্র বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি গার্ডেন এন্ড পার্ক। নানা প্রজাতির রং-বেরঙের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর গোটা পার্ক এলাকা। শীতের সকালে গায়ে কুয়াশা মেখে পাখিরা উড়ছে আপন মনে। চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহিন বনের দুই পাশে পাখিদের কিচির-মিচির মাতিয়ে রাখে সকাল-বিকেল। কান পাতলেই শোনা যায় পাখির ডাক।
বিশেষ করে শীতের সময় দেখা যায় দল বেঁধে পরিযায়ী পাখিদের কলকলানি ও খুনশুটি। পুরা পার্ক জুড়ে গাছের ডালে পাখিদের বসা ও পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য পর্যটক ও পথ নারীদের মুগ্ধ করো তোলে। পার্কের সামনে মেইন সড়কে দাঁড়িয়ে অতিথি পাখির কলকলানি উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য উপভোগ করতে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে পথচারীরা। অনেকেই এই দৃশ্য স্মৃতি করে রাখতে ভিডিও এবং ছবি উঠিয়ে রাখছেন।
সুদূর সাইবেরিয়াসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখি বছরের নভেম্বরের প্রথম দিকে আসতে শুরু করে এবং মার্চ পর্যন্ত অবস্থান নেয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া নানান প্রজাতির অতিথি পাখিরা সন্ধ্যার আগেই পার্কে ফিরতে শুরু করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা এসব পাখিরা বসছে পার্কেও চারি পাশে অবস্থিত ছোট-বড় গাছের ডালে। পাখিদের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির শব্দের টানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। অনেকেই মুঠোফোনে ধারণ করছেন প্রাকৃতিক এসব দৃশ্য।
ফ্যান্টাসি গার্ডেন এন্ড পার্ক এর দায়িত্ব থাকা জি এম খালেকুজ্জামান বলেন, ফ্যান্টাসি গার্ডেন এন্ড পার্ক এর দায়িত্বরত জি এমন খালেকুজ্জামান বলেন ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটি চালু করা হয়। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ পার্ক। এখানকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এখানকার পাখি। প্রায় নয় থেকে দশ মাস এখানে বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি পাখির সমন্বয় ঘটে।তিনি আরো বলেন,পার্কের চারিপাশে লাগানো হয়েছে বাইন,কেওড়া,গোল,গোরান,গেওয়া,ওড়া,কাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
এখানে বিকাল হলেই দেখা যায় হাজার হাজার দেশীয় ও শীতের অতিথি পাখি দলে দলে উড়ে বেড়াচ্ছে ।যার মধ্যে,বিল বাকচু,পানি কামড়ি,হাঁস পাখি,কুচ বক,পুটি বক,ঢালী বক,শালিখ,চড়ুই পাখি সহ অনেক প্রকার পাখির আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা পার্কের এলাকা।। কিন্তু কালের বিবর্তনে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
পাখি হারাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কমেছে অতিথি পাখির আনাগোনা। তারপরও প্রতিবছর শীত মৌসুমে আমাদেরও অঞ্চলে ঝাঁক বেঁধে আসছে অতিথি পাখিসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।পরিবেশবাদী সংগঠন বনবিবির সভাপতি প্রকাশ ঘোষ বিধান বলেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও হাজার হাজার অতিথি পাখি শীত থেকে বাঁচতে ও খাবারের আশায় আমাদের এলাকায় এসেছে। আর নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে তারা জড়ো হচ্ছে নদীর কাছাকাছি বড় বড় বনাঞ্চলে।
নদীর পাড়ে গাছপালা বেশি থাকায় এটাকে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। তাই অতিথি পাখি ও দেশীয় প্রজাতির পাখির একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করতে আমি গাছে গাছে মাটির পাত্র বেধে দিচ্ছি।আমাদের উপকূলীয় এলাকার অতিথি পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো বড় বড় বাগান যেখানে বেশি পরিমাণ গাছ আছে। এখানে অনেক নির্জন এলাকা রয়েছে, যাতে পাখিদের নিজস্বতা রক্ষা পায়।
এ সময়ে সারাবিশ্বে বিপন্ন এমন অনেক পাখি এ অঞ্চলে দেখা যায়। প্রকৃতি ভালো রয়েছে বলেই পাখিরা আসছে। তাই পাখিরা যাতে বিরক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই এখানে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, চক বগুড়া মৌজায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি গার্ডেন এন্ড পার্ক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত নয়নাভিরাম, ব্যক্তি প্রদত্ত নিরাপত্তা কর্মীর তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খল ও বিনোদন প্রেমীদের চিত্ত বিনোদনের জন্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে।
এখানে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।বিকেল হলে গাছগুলোতে হাজার হাজার পাখি নির্ভয়ে অবস্থান করে। এখানে পরিযায়ী পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শীতপ্রধান দেশ থেকে প্রতিবছরই অতিথি পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আমাদের ও উপকূলীয় অঞ্চলে ছুটে আসে।
যার ফলে শীতের এই মৌসুমে আমাদের এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ পুরো এলাকার মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে। অনেক পথচারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পাখির কোলাহল উপভোগ করে। এ ব্যাপারে পাইকগাছা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, পৃথিবীতে ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রজাতির পাখি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এরা নিজ দেশের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করে থাকে।
সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়া, হিমালয় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে আমাদের দেশে আসে। শীত মৌসুম শেষ হলে আবার তারা পাড়ি জমায় নিজ নিজ দেশে। অতিথি পাখি শীতকালের সৌন্দর্য। পাখিদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। প্রতিবছরের মতন এবারও আমাদের এলাকাতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে।
এসব পাখিদের আবাসস্থল যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের বন কর্মীসহ সবাই সচেষ্ট রয়েছে। তবে আশার কথা হলো মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা পাখি শিকার থেকে নিজেদের বিরত রাখছে।