প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৬:০৬:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
গোপালগঞ্জে ইবাদ আলী খাঁ (৬৫) নামে অন্ধ এক গুণী শিল্পীকে আয়বর্ধনের ব্যবস্থা করে দিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুল আলম।
ইবাদ আলী খাঁ অন্ধ কন্ঠ শিল্পী হিসেবে জেলায় বেশ খ্যাত। দাম্পত্য জীবনে সে ৪ সন্তানের জনক। সন্তানদের মধ্যে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২ ছেলে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের আলাদা সংসার রয়েছে।
ইবাদ আলী খাঁর বাড়ির জায়গা থাকলেও মাঠে কোন জমিজমা নেই। চরম দারিদ্রতার মধ্যে তাকে বসবাস করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে শেষ বয়সে হাট-বাজার, মাঠে-ঘাটে, অলি-গলিতে হারমনিয়াম বাজিয়ে গান গেয়ে যৎসামান্য অর্থ উপার্জন করে কোন রকম জীবণ-যাপন করেন। বয়সের ভারে এখন তার হারমনিয়াম ঘাড়ে বহন করতে বেশ কষ্ট হয়। তারপরও জীবিকার টানে হাট বাজারে গান গেয়েই তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হতো। বিষয়টি জেনে মানবিক জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম তার পাশে দাড়িয়ে সাহায্য করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ইবাদ আলী খাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামে। সে ওই গ্রামের মরহুম ছাবেদ আলী খাঁ’র ছেলে।
এদিকে মানবিক জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম অন্ধ কন্ঠশিল্পী ইবাদ আলী খাঁর দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পেরে তার পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে গঠিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় অন্ধ কন্ঠ শিল্পীকে তিন চাকার একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান প্রদান করেন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম তার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যানটি হস্তান্তর করেন।
এ সময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা বদর, গোপালগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপরিচালক মো. হারুন অর রশীদ, সহকারী পরিচালক মো. জুলফিকার আলী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার রন্টি দাস সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্ধ কন্ঠশিল্পী ইবাদ আলী খাঁ বলেন, হারমনিয়াম ঘারে নিয়ে হাট, বাজারে গান গেয়ে ভিক্ষা করতাম। বসয় হয়েছে। তাই এতে খুব কষ্ট হয়। এ আয় দিয়েই আমার সংসার চলত। জেলা প্রশাসক স্যার কাজী মাহবুবুল আলম বিষয়টি জানতে পেরে আমার পাশে এসে দাড়িয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তহবিল থেকে একটি ভ্যান আমাকে দিয়েছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, এ ভ্যান আমার ছেলে মো. আলীকে ভাড়া দিয়ে দেব। ভ্যান ভাড়ার অর্জিত অর্থ থেকে আমি সংসার চালাতে পারব। এ বৃদ্ধ বয়সে আর গান গেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হবে না।
অন্ধ কন্ঠশিল্পী ইবাদ আলী খাঁ’র ছেলে মো. আলী খাঁ বলেন, এ ভ্যান চালিয়ে আমি প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার টাকা আয় করতে পারবো। এখান থেকে আমার বাবাকে আমি প্রতিদিন ভ্যান ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা প্রদান করব। আয়ের বাদবাকী টাকা দিয়ে ভ্যান মেরামত ও আমরা সংসারের পেছনে ব্যয় করবো। সংসারের পেছনে ব্যয় করার পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করব।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের অর্থ থেকে এ ধরনের মানুষকে পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এরমধ্য দিয়ে এ শ্রেণির মানুষ যাতে ভাল থাকতে পারে, তার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গোপালগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, অন্ধ কন্ঠশিল্পী ইবাদ আলী খাঁ সহ ৬ জন ভিক্ষুককে আমরা পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এভাবে আমরা গোপালগঞ্জকে এক সময় ভিক্ষুক মুক্ত করে তাদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করবো। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানান তিনি।