দেশজুড়ে

আম্পানেও বাংলাদেশকে  মায়ের মতো আগলে রাখলো সুন্দরবন

  প্রতিনিধি ২১ মে ২০২০ , ৩:৩৮:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা ব্যুরো : বরাবরই সুন্দরবন মাতৃসুলভ আচরণ করে আসছে। এবারও ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশের লোকালয়ে আঘাত হানার আগেই তার প্রবল শক্তি হ্রাস করে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন।

সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ থেকে রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিল সুন্দরবন।সুন্দরবন। সুন্দরবন দেশের উপকূলকে কালাপাহাড়ের মতো আগলে রেখেছে সবসময়। সুন্দরী-গেওয়াসহ নানা বৃক্ষের মজবুত বেষ্টনী আর অসংখ্য নদীনালা বছরের পর বছর ধরে প্রাণী ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে। নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয়নি।সুন্দরবন।

বুধবার (২০ মে) তীব্র বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও উঁচু জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ১১২ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে। প্রায় ৬ ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে রাত ১২টার দিকে খুলনা জেলাকে অতিক্রম করেছে আম্পান। সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করার কারণে আম্পানের তাণ্ডব কিছুটা কম হয়েছে।

আম্পানের আঘাতে মোংলার পশুর নদের পাশে তাণ্ডব।ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করায় আম্পানের তাণ্ডব কিছুটা কম হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করতে বুক চিতিয়ে লড়াই করলো সুন্দরবন।

তিনি বলেন, ভারত থেকে আম্পান যে গতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তার প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনি বনের গাছপালায় এই ঝড় বাঁধা পাবার কারণে। ভারতের সুন্দরবনের অংশের চেয়ে বাংলাদেশ অংশে গাছ ঘন থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে।সুন্দরবন। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও ফণি থেকেও রক্ষা করেছে সুন্দরবন।

প্রাথমিকভাবে বন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গাছপালা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে এখনো বাতাস বইছে। আম্পানে ক্ষতি তো কিছু হয়েছে। বনরক্ষী ও কর্মকর্তারা ঝড়ের কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন। তারা এখন গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করবেন।

তবে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হয়েছে তা বলবো না। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেশি ছিলো। এতে সুন্দরবনের ভেতরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি ডুকেছে। এটাই বেশি ক্ষতি হয়েছে। 

বন সংরক্ষক বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বুক পেতে দিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঝড়ের বেগ অনেক কমে গেছে যার কারণে আল্লাহর রহমতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।আম্পানের আঘাতে মোংলার পশুর নদের পাশে তাণ্ডব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি অ্যান্ড উডটেকনোলজির সাবেক ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. ইনামুল কবীর বলেন, সুন্দরবন আমাদের রক্ষা কবজ। সুন্দরবনের জন্ম হয়েছেই আমাদের রক্ষা করার জন্য। এ বন আমাদের কাঠ দেবে সম্পদ দেবে এজন্য এর জন্ম হয়নি। এগুলো আমাদের বাড়তি পাওনা।

গাছের মূল ভূমিকা অক্সিজেন দেওয়া, ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা। এর ফাঁকে ফাঁকে আমরা কিছু সম্পদ আহরণ করি। গাছের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বলেই সুন্দবনের বাংলাদেশের এই লোকেশনে অবস্থান। বাংলাদেশে ঝড় প্রবেশের মুখেই সুন্দরবনের অবস্থান। এর কারণে ঝড় প্রবেশ করতেই বনে বাধার সম্মুখীন হয়। সুন্দরবনের জন্মই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন আসলে নিজের ক্ষয়ক্ষতি করে আমাদের রক্ষা করে। আমরা যদি পরবর্তীতে বনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না করি তাহলে বনের গাছ প্রাকৃতিকভাবেই নিজেরা আবার বেড়ে ওঠে। আগের পর্যায়ে চলে যায়। এর জন্য বাড়তি কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। 

আরও খবর

Sponsered content