আন্তর্জাতিক

আশরাফ গনি নিয়ে আফগানিস্তানে সমালোচনা

  প্রতিনিধি ১৬ আগস্ট ২০২১ , ৭:০৮:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো আফগানিস্তান দখল করে কাবুলে তালেবান সদস্যরা প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোনো প্রতিরোধ, প্রতিহত তো দূরের কথা, সামনাসামনি বসে আলোচনার সাহসটাও এমনকি দেখালেন না সদ্য সাবেক হওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তাঁর এত দিনের সব মিত্র–বন্ধু এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে রেখে তিনি ঠিকই পালালেন প্রতিবেশী দেশে। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করছেন।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরও কাবুল নিজের কবজায় থাকবে বলে এত দিন যে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন আশরাফ গনি, তা যে এক বিরাট মিথ্যা তা তো এখন পরিষ্কার। নিজের শক্তি–সামর্থ্য নিয়ে সঠিক ধারণা না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, অপরাধও নয়। কিন্তু দায়িত্বশীলতা? এই একটি জায়গাতেই সবাই প্রশ্ন তুলছেন।

আশরাফ গনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তাঁর অধীনে একটি সামরিক বাহিনী আছে। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ও মার্কিন বিনিয়োগে পেলেপুশে বড় করা এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও অনেক। তারপরও শুধু কাবুলের বিভিন্ন দিক থেকে তালেবান সদস্যরা প্রবেশ করতে শুরু করলেই তিনি নীরব হয়ে গেলেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা লোকের সংখ্যাও তো কম নয়। এটি অন্তত তালেবান দখলের পর আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া বা ছেড়ে যেতে চাওয়া মানুষদের সংখ্যাই বলে দেয়। তাদের উদ্দেশে আশরাফ গনির কিছুই বলার ছিল না। সবাই যখন ভাবছে, কোনো সহিংসতা না করে কাবুল ছাড়তে চাওয়াদের যে সুযোগ তালেবান দিয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট নিশ্চয় কিছু করবেন, তখন জানা গেল, তিনি কাবুল ছেড়েছেন। তারপর জানা গেল, তিনি আফগানিস্তানই ছেড়ে পাশের দেশ তাজিকিস্তানে গিয়েছেন।

গতকাল রোববার যখন প্রথম মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যসহ আশরাফ গনির দেশত্যাগের খবর আসে, তখনো অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। প্রথম বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের মধ্য দিয়ে সামনে আসে। পরে আল–জাজিরায় খবর প্রকাশের পর আর সংশয় থাকে না। এর পর যখন আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ তাঁকে ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’ উল্লেখ করে তাঁর দেশ ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন, তখনই শুরু হয় সমালোচনা।

আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতিতে সাবেক হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির এই ভূমিকাকে ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনীতিক। আল–জাজিরাকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তিনি পুরো সময় মিথ্যা বলে গেছেন। আফগানদের তিনি অন্ধকারে রেখেছেন।’

ওই রাজনীতিক আশরাফ গনির মিথ্যার নমুনা হিসেবে গত শনিবার দেওয়া তাঁর বক্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরেন। ওই বক্তব্যকে তিনি আগে থেকে রেকর্ড করা বলে দাবি করেন। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া সেই বক্তব্যে আশরাফ গনি অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্বস্ত করেছিলেন। বলেছিলেন, তিনি এই বিষয়গুলো বন্ধ করতে এবং এখন পর্যন্ত হওয়া মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে মনোযোগ দিচ্ছেন। অথচ এই বক্তব্য প্রচারের মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই জালালাবাদ ও মাজার–ই–শরিফের পতন হয়।

এদিকে আশরাফ গনির পলায়নের কয়েক ঘণ্টা আগে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বালখের সাবেক ক্ষমতাধর কমান্ডার আতা মোহাম্মদ নূর আফগান সরকারকে ‘কাপুরুষ’ আখ্যা দেন। মোহাম্মদ নূর অবশ্য বেশ আগে থেকেই আশরাফ গনির সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ভাষ্যমতে, যা ঘটেছে, তা আফগান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ীই হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তালেবান দখলে পুরো আফগানিস্তান চলে যাওয়াটা বিস্ময়কর। একের পর এক প্রদেশ ছেড়ে দেওয়াটা অবশ্যই পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিন্তু এ সম্পর্কে তারা সাধারণ মানুষকে কিছু জানায়নি।

গত মাসে এই একই কথা আল–জাজিরাকে বলেছিলেন হেরাত প্রদেশের সাবেক মুজাহিদীন কমান্ডার ইসমাইল খান। একের পর এক জেলা ও প্রদেশ তালেবান দখলে যাওয়াটা একটা পরিকল্পনার অংশ।

তবে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক সাবেক কর্মকর্তা আশরাফ গনিকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। তিনি বলছেন, তাঁর দেশ ছাড়ার কারণটি পরিষ্কার। এ নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু তিনি যেভাবে দেশ ছেড়েছেন, তা হতাশাজনক। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে মানুষের সামনে তাঁর হাজির না হওয়াটা এবং দেশবাসীর উদ্দেশে রেকর্ড করা একটি বক্তব্য প্রচার করা, তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটা দুঃখজনক। এই অঞ্চলে তিনি গোলমাল পাকিয়েছেন, মানুষকে বিভাজিত করেছেন, গণতন্ত্রের ক্ষতি করেছেন এবং বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছেন।’

আশরাফ গনির ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচন ও তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উভয় নির্বাচনেই তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহকে পরাস্ত করতে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফলে এই নানা ঘুরপথে নিজের গদি টিকিয়ে রাখা আশরাফ গনির বিরুদ্ধে এখন স্বাভাবিকভাবেই সবাই ক্ষেপে উঠেছেন। সবাই একে ভীষণ রকম স্বার্থপরতা হিসেবে দেখছেন। আফগানিস্তানের এক নারী অধিকারকর্মী তাঁর পলায়ন নিয়ে বলেছেন, ‘তিনি পালিয়েছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে এখানেই থাকতে হবে।’ তবে তিনি বলছেন, ‘গনি কী করেছেন, আর কী করেননি, তার চেয়ে বড় কথা হলো এখন তালেবানদের দেখাতে হবে তারা তাদের আগের ছয় বছরের শাসনকালের চেয়ে আলাদা। এই দেশের নারী–পুরুষ উভয়েরই একটি সম্মানজনক জীবনের অধিকার রয়েছে।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by