চট্টগ্রাম

আশির্বাদের বৃষ্টি যেনো চট্টগ্রামের জন্য অভিশাপ

  প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২৪ , ৫:১১:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

আশির্বাদের বৃষ্টি যেনো চট্টগ্রামের জন্য অভিশাপ

গরমে হাসফাঁস করতে থাকা দেশবাসী যখন বৃষ্টির জন্য প্রাথর্ণারত ঠিক তখনই চোখে মুখে উদ্বেগ উৎকন্ঠা নিয়ে ভাবতে থাকে চট্টগ্রামের নগরবাসী। অন্যরা বৃষ্টি চাইলেও, তাদের ভাবনায় উঁকি দেয় বৃষ্টিতে জলজটে সৃষ্ট দূর্ভোগের দৃশ্য। তাই বহুল কাংখিত বৃষ্টিও যেনো চট্টগ্রামবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে বর্ষিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতো দূরের কথা, সামান্য বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। ফলে রহমতের বৃষ্টি আর রহমত হিসেবে নয়, বিশাল বিষপোঁড়া হয়েই ঝরে চট্টগ্রামে।

সোমবার (১ জুলাই) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরো নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে পানির নিচে। সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় গণপরিবহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। সৃষ্ট হয়েছে যানজট। একদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে এ বৃষ্টি বিভ্রাট মাথায় নিয়েই। চট্টগ্রামে ৪ দিনের টানা বর্ষণে নগরীর বিস্তীর্ণ নিম্মাঞ্চলে হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং এ অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টি সোমবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম নগরীর কিছু নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, হালিশহর বড়পুল, ছোটপুল, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, চকবাজার, চাক্তাই-আসাদগঞ্জ, ইকবাল রোড, পাঁচলাইশ, কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা, কাতালগঞ্জ, শুলকবহরসহ নিম্মাঞ্চলে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে রয়েছে। এসব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষতি সাধন করেছে। নগরের বেশকিছু সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

নগরের ইপিজেড বন্দর-পতেঙ্গা থানাধীন বন্দরটিলা, সিমেন্ট ক্রসিং, নারিকেলতলা, রুবি সিমেন্ট গেট, নুরগনিপাড়া, স্টিল মিল-(মহাজন) হিন্দুপাড়া, খালপাড়, বন্দরটিলার নয়াহাট, নিউমুরিং, সিমেন্ট ক্রসিং-আকমল আলী রোড এলাকা জুড়ে সড়কে পানিতে রয়েছে।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার এক অধিবাসী জানান, টানা বৃষ্টিতে আবাসিক এলাকার রাস্তা পানিতে ডুবে আছে। জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে পুরো এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে। এক দিকে জোয়ারের পানি অন্য দিকে বৃষ্টির পানি, সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তাঁরা।

একাধিক নগরবাসীর অভিযোগ, সোমবার সকাল থেকে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রাত্রীদের নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। গণপরিবহন, রিকশা, টেম্পো ও সিএনজি অটোরিকশাসহ সর্বত্রই দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। ৪ দিনের টানা বর্ষণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসাবাণিজ্য।

এখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরাতন চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড ও আসাদগঞ্জের প্রতিটি সড়ক ডুবে যায়। পাশাপাশি চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, নবী মার্কেট, মাল্লা মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি ও এজাজ মার্কেটসহ বেশির ভাগ মার্কেটেই পানি ঢুকে পড়ে।

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ৩ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের মধ্যে তৈরী হয়েছে উৎকন্ঠা। নগরবাসীর দাবি, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না মিললে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে খালি একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কেবল টাকার অপচয় বলেও নগরবাসীর দাবি।