আবুল কালাম আজাদ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৪:৪৬:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে জমি-জমার বিরোধকে কেন্দ্র করে মরিয়ম বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধাকে এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই বৃদ্ধা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে। এদিকে থানা পুলিশের ভাষ্য, এসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় তা অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মাদারটারী এলাকার আবুল তালেবের ছেলে মঞ্জু মিয়া’র (৪৮) পরিবারের সাথে প্রতিবেশি আজিজার রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম রানু’র (৪৮) পরিবারের দীর্ঘদিন থেকে জমাজমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মঞ্জু মিয়ার ছোট ভাই মজনু মিয়া (৩৮) বাড়ির পাশে পুকুর থেকে মাছ ধরে বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে রানু’র বাড়ির সামনে পৌছিলে তারা মজনু মিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
মজনু মিয়া ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে মজনু মিয়ার মা মরিয়ম বেগম ও স্ত্রী শিউলী বেগম (৩৫) এগিয়ে আসেন। এসময় রানুর পরিবারের লোকজন মঞ্জুর পরিবারের সকলকে এলোপাথারী ভাবে মারপিট করেন। এক পর্যায়ে রানু মিয়ার সাথে প্লাষ্টিকের বোতলে থাকা এসিড মরিয়ম বেগমের মুখে ও কপালে ঢেলে দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, এসিড নিক্ষেপের পর মরিয়ম বেগমসহ আহতদের আত্মচিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরবর্তীতে মরিয়ম বেগমের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
সেখানেও তার অবস্থা আশংখাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি রংপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ঘটনার পর ওই দিন রাতেই মঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪ জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মঞ্জু মিয়ার দাবী, প্রতিপক্ষ তার মায়ের মাথায় ও মুখে এসিড ছুরে মারেন। ঘটনার দিন শনিবার রাতেই থানায় অভিযোগ দিলেও তা সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মামলা হিসাবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। বর্তমানে আমার মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন।
এসিড নিক্ষেপের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম রানু’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দৈনিক ভোরের দর্পণকে জানান, মঞ্জু মিয়ার পরিবারের সাথে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এসিড নিক্ষেপের কোন ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করলেই সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্প কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ দৈনিক ভোরের দর্পণকে জানান, ওই দিন দুপুরে মরিয়ম বেগম নামে এক বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মুখে ও মাথায় কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ ছোরা হয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়ার কারণে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে কি ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে দৈনিক ভোরের দর্পণকে বলেন, এসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সন্দেহজনক। তাই বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।