রংপুর

উলিপুরে তিস্তার ভাঙ্গনে নগরপাড়া সহ চারটি গ্রাম হুমকির মুখে

  প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২৪ , ৪:১৫:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে তিস্তার ভাঙ্গনে নগরপাড়া সহ চারটি গ্রাম হুমকির মুখে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে থেতরাই ইউনিয়নের নগরপাড়া সহ চারটি গ্রামের শতশত মানুষ তিস্তার ভাঙ্গনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বসতভিটে নদী গর্ভে হারিয়ে মাথা গোজারা ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছেন না এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। বেশ কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানী ঢলে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধির ফলে চরের নিম্নাঞ্চল গুলোতে বন্যায় রুপ নিয়েছিলো।

এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত ৪টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকার তিস্তা পাড়ের মানুষে। এসব এলাকায় তিস্তার তিব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন।

এদিকে থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে নগরপাড়া, কুমারপাড়া, মুন্সিপাড়া ও বামনপাড়া গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবারের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মানুষ। হুমকির মুখে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১টি, মসজিদ ৪টি ও নুরানি মাদ্রাসা ১টি। এসব এলাকায় হুমকির মুখে থাকা মানুষেরা জানান, আমরা ত্রাণ চাইনা আমরা চাই নদী সংস্কার। প্রতিদিনে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তাদের দুঃখ দূর্দশা কেউ দেখেনা।

এছাড়াও উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এসব ইউনিয়নের তিস্তা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোর মধ্যে পশ্চিম বজরা, বাঁধের মাথা, উত্তর সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট নদীর পশ্চিম পাড়, সাতালস্কর, চর বজরা, সন্তোষ অভিরাম, কাজিরচক, টিটমা, ঠুটাপাইকার, কর্পুরা, লাল মসজিদ ও অর্জুন এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদী ভাঙনে একর ময় একর আবাদি জমি এবং বসতবাড়ি বড় বড় গাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা পাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন। তিস্তার ভাঙ্গনে শতশত বিঘা জমি ও ঘরবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বন্যার পর তিস্তা পাড়ের মানুষের নতুন দুর্ভোগের স্বীকার নদী ভাঙ্গন। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় বসত ভিটে ঘর বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা উপায়ন্তর না পেয়ে অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, শতশত বাড়িঘর ও একরময় একর আবাদি জমি। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থারও দাবি জানান। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষেরা জানান, যে ভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তারাতারি ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যাবস্থা না নিলে এসব এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের ৩ থেকে ৪ হাজার পরিবারের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ অসহায় হয়ে যাবে।

এছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদরাসা, গোড়াই পিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রাম গুলোর কয়েক হাজার পরিবার। তিস্তার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকেরা বলেন, আমরা কোন সাহায্য চাইনা নদী সংস্কার চাই।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকায় চোখের সামনে তিস্তার গর্ভে বসতভিটে বিলীন হয়ে যাওয়া মনোয়ারা বেগম (৬৫) বলেন, আমি বিধবা হয়েছি ২৫ বছর হয়ে গেছে। আমার একমাত্র সম্বল বসতভিটে। আজ তিস্তা কেড়ে নিলো। আমি কোথায় যাবো কোথায় থাকবো কি খাবো বলে কেঁদে ফেলেন।

বসত ভিটে বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে অন্যের বাড়িতে থাকা নুরনবী মিয়া (৪২), চাঁদ মিয়া (৩৫), শাহাদাৎ (৩২), রফিকুল ইসলাম (৩৬), আমিন মিয়া (৫৬), হোসেন আলী (৪৫), ইব্রাহিম মিয়া (৬০) সাদ্দাম হোসেন (৩২), মনোয়ারা (৬৫), ছামাদ (৪৮) ও হাকিম মিয়া (৪৯) সহ আরও অনেকে বলেন, তিস্তা নদী আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের চলার মত কিছুই থাকলো না। আমরা এখন অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। নদী ভাঙ্গন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবী জানান।

এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তিস্তার পাড়ে ভাঙ্গনের কবলে পড়া নুর ছালমা (৪০), মেনেকা (৫০), নুর ইসলাম (৩৬), কাছুয়া (৭০), ছাইফুল (৪০), আলম (৩৬), হবিবর (৬৫), মতিন মিয়া (৫২), আজিত মিয়া (৬৫), ও আফরুজা বেগম (৪৫) সহ আরও অনেকে জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিনাপাত করছি। আমরা সাহায্য চাইনা আমরা চাই নদী সংস্কার। এছাড়া ভাঙ্গন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবী জানাচ্ছি।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী রুমি খাতুন (ষষ্ঠ শ্রেণি), মনিষা (৫ম শ্রেণি), ববিতা (৪র্থ শ্রেণি) ও রাকিব মিয়া (২য় শ্রেণি) সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে আমাদের পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে। আমরা স্কুলে যেতে পারিনা। রাত্রে ঘুমাতে পারিনা। বাসায় পড়াশোনা করেতে পারিনা। তিস্তা নদী আমাদের স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙ্গন এলাকা গুলোর জন্য বরাদ্দের চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ হয়ে আসলে ভাঙ্গন রোধের কাজ শুরু হবে। এছাড়া পর্যাক্রমে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে ভাঙ্গন রোধের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, নতুন করে নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content