রংপুর

উলিপুরে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল

  প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৩:৪৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সবজিতে স্বস্তি থাকলেও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল। তাতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। এখন সবজির বাজার যে ভাবে আছে তাতে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও লাগামহীন পেঁয়াজের দাম থাকায় ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের।

উলিপুর পৌর বাজারের আড়ৎদার কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১১০ টাকা, এলছি পেঁয়াজ ৯০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ১২০ টাকা ও ১০০ টাকা। নানা ভাবে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু ও আদার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। সারা বছর জুড়ে অন্যান্য জেলা থেকে সবজি আমদানী করতে হয় বলে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত হয়ে আসছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে তারা বলেন স্থানীয় ভাবে পেঁয়াজের আমদানি হলে কিছুটা দাম কমতে শুরু করবে।
সরেজমিন রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে উলিপুর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারদের কাছে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ১০ টাকা তা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা, আলু দেশি ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, আলু হলান্ড ৪৬ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, শশা ২০ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা খুচরায় ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা খুচরায় ৮০ টাকা, পিয়াজ এলসি ৯০ টাকা খুচরা ১০০ টাকা, দেশি পিয়াজ ১১০ টাকা খুচরায় ১২০ টাকা, পেপে ২৫ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, পটল ৪০ টাকা খুচরায় ৬০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা খুচরায় ২২০ টাকা, আদা ২৬০ খুচরায় ২৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪৫০ টাকা খুচরায় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ফুলকপি ২৪ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, বাঁধা কপি ২৪ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা। মুলা ৪ টাকা খুচরায় ৮ টাকা, ধনেপাতা ২০ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, লাউ পিচ প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা খুচরায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

লাউ বিক্রি করতে আসা দলদলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দলদলিয়া পাতিলাপুর গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলী জানান, এবারে ২০ শতক জমিতে লাউয়ের চাষ করেছি। লাউ বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ছোট বড় লাউ বেঁচছি প্রায় ৯’শ টি। আজ বিভিন্ন দাম ভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাইকেরিতে বিক্রি করেছি।

খুচরা সবজি বিক্রেতা মামুন মিয়া (২২), আব্দুর রাজ্জাক (৪৬) ও নুর ইসলাম (৬৫) জানান, আমরা পাইকারী দামের চেয়ে সামান্য লাভ করেই সবজি বিক্রি করে থাকি। কিছুদিন আগে সবজির বাজার বৃদ্ধি ছিল। তাই ক্রেতারা ক্রয় করতে চাইত না। চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করেতেন। এখন স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজির আমদানি হওয়ায় দাম কমেছে বিক্রিও বেড়েছে।

খুচরা বাজারে সবজি নিতে আসা গৃহবধু লিপি আক্তার (৩৫), জাহানারা খাতুন (২৯) ও তৈয়ব মিয়া (৫৫) বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে আজ সবজির কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা দাম কমেছে। আবার কিছু কিছু সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আলু ছিল ৪০ টাকা আজ ৫০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ এলছি ছিল ১১০ আজ ১০০ টাকা কেজি, পটল ৪০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৬০ টাকা কেজি, বেগুন ২০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ১০ টাকা কেজি, মুলা ১০ টাকা থাকলেও আজ ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত বছরের এই সময়ে সবজির দাম অনেক কম ছিল। এ বছরও সবজির দাম কমতে শুরু করছে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম ও আদার দাম না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান তারা।

সবজি বাজারের আড়ৎদার মুরাদ মিয়া (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৬৫) ও আব্দুল হালিম (৪৫) বলেন, বর্তমান স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া পেঁয়াজের বাজার বৃদ্ধি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে কিছুটা কমতে শুরু হবে। এছাড়া আমাদের এলাকায় ধান, পাট, ভ্ট্টুা বেশি চাষাবাদ করা হয়।

এ কারনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে সবজি নিয়ে আসতে হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও থেকে। তারা আরও বলেন, ওই জেলার মোকাম (পাইকারী বাজার) গুলোতে সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানে আমদানী কমে যায় ফলে দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া গাড়ি ভাড়ার উপর কিছুটা দাম কম বা বেশি হয়।

তাছাড়া আলুর বাজার দর কমানোর বিষয়ে বলেন, মোকামে আজ আলুর চালানের দাম কমেছে তাই আমারও কম দামে বিক্রি করছি বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, বর্তমানে সবজির মৌসুম শুরু হওয়ায় স্থানীয় ভাবে সবজি আমদানি শুরু হয়েছে ফলে কিছুটা মূল্য কমতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের আমদানি শুরু হলে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by