রংপুর

উলিপুরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষে সফল মাঈদুল

  প্রতিনিধি ৫ আগস্ট ২০২৪ , ৬:১৩:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষে সফল মাঈদুল

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষি উদ্যোক্তা মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ। উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দলদলিয়া বাকরেরহাট রাজারাম এলাকায় যুবরাজের বাড়ি। তার বাবা আব্দুল আজিজ একজন অবসর প্রাপ্ত পুলিশের এস আই ছিলেন। এখন তিনিও একজন সফল ফল চাষি। যুবরাজ বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজের প্রতি মোটামুটি আগ্রহী হয়ে উঠেন।

যুবরাজ তার পৈতৃক বিশাল আকারের পরিত্যক্ত জমিতে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে বিদেশি নানা জাতের ফল উৎপাদন করে ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ চমক সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে এবার এগারো জাতের ড্রাগন চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম সফলতা অর্জনে করেছেন। এই এগারো জাতের ড্রাগনের মধ্যে বারি-১, পিংক রোজ, তাইওয়ান পিংক, রেডভেল ডেড, বোল্ডার ও ইজরায়েলি ইয়োলো উন্নত জাতের ড্রাগন হিসেবে খ্যাত। যার স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। মিষ্টতা অনেক বেশি এবং রসালো।

সরেজমিন যুবরাজের ফলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের ফলের চারা দিয়ে সাজিয়েছেন বাগান। আপেল, মাল্টা, কমলা, আম, লটকন, পেয়ারা, খেজুর, লিচু ও ড্রাগন সহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে বাগানটিতে। গাছ গুলোতে ফলন হচ্ছে। তার মধ্যে ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন এ ফল চাষি। এ ফলের বাগান থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল বাজারে বিক্রি করে বাণিজ্যিক ভাবে আয় করছেন ফল চাষি মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ। ফলের বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন। যুবরাজ ফলের চারা গুলো দেশের বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন। তার শখের ফলের বাগান এখন বাণিজ্যিক ভাবে রুপ লাভ করেছে। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পুরন করে বাজারে বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন যুবরাজ।

মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ বলেন, আমার বাগানে এগারো জাতের ড্রাগনের গাছ রয়েছে ৩ শত ৭০ টি। প্রায় প্রত্যেকটি গাছেই ফলন আসা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ফল ওজনে প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল প্রতি কেজি পাইকেরিতে প্রায় ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় এক’শ কেজি ফল বিক্রি করে আয় হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এখনো যে ভাবে গাছে ড্রাগন আছে তাতে আরও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হবে।

তিনি বলেন, এটি উন্নত জাতের হওয়ায় রোগবালাই কম হয়। এ কারণে সহজেই এ ফল চাষ করা যায়। চারা লাগানোর ১ বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করেছে। আকার-আকৃতি, পুষ্টিগুণ ও দামের কারণে আমাদের দেশের বাজারগুলোতে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ড্রাগনের গাছে তেমন সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বছরে গড়ে দুই-একবার সার দিলে আর তেমন প্রয়োজন পড়ে না। এর গাছে পাতা কম থাকার কারণে পোকার আক্রমণ কম হয়ে থাকে। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে দীর্ঘসময় গাছ থেকে ফল পাওয়া য়ায়। আমাদের দেশে কৃষক ও খামারিদের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে ফলের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এছাড়াও ড্রাগন ফলের চাষের ধারণা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে এখন অনেকে আসেন আমার কাছে। আমি তাদের বিভিন্নভাবে ড্রাগন ফলের চাষ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে এর চাষে উদ্বুদ্ধ করি। অনেকে এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদে ও আঙিনায় অল্প করে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়ে চাষাবাদ করছেন।

ড্রাগন দেখতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে লেয়াকত (৫২), রুবেল (৩৫), মহাশিন (২৬), দেলোয়ার (৪৮) ও মকবুল (৬০) সহ আরও অনেকে বলেন, মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান লাগিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ফলের বাগান দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থীরা আসেন। আমরা এলাকাবাসী অনেক গর্বিত। যে ফল গুলো এখানে চাষ হয় আমরা বাজার ছাড়া দেখতে পেতাম না। এখন এ সকল ফল গ্রামে দেখেই মন ভরে যায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা কিনতে পাওয়া যায়। এ সকল চারা ক্রয় করে বাড়ির পাশে থাকা পরিত্যক্ত জায়গায় বাগান করার কথা জানান তারা। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, আমি যুবরাজের ড্রাগন বাগানটিতে বিভিন্নভাবে কৃষি সহযোগিতা করছি। ওই এলাকায় দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা যুবরাজকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি এখন ওই বাগান থেকে মোটামুটি আয় করছেন। এ উপজেলায় ড্রাগন ফলের চাষের জন্য আমরা অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছি।

আরও খবর

Sponsered content