চট্টগ্রাম

চাকরি রাজস্ব করতে ভুয়া তথ্যে দৈনিক বেতনের কর্মচারী ইউছুফের মামলা

  প্রতিনিধি ২৬ জুন ২০২৩ , ২:৫৬:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৈনিক বেতনে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত মো. ইউছুফ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। রাজস্বখাতে চাকরিটি পাকাপোক্ত করতে তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।  

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২ সালে দৈনিক বেতন হিসেবে ইউছুফকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।  ২০২১ সালের মাস্টার রুলের কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর তালিকা গেঁটেও তার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অফিসিয়াল কোন বেতন কাঠামোতেই তার দেখা যায়নি। ২০২২ সালেই ইউছুফের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান ও মোবারক হোসেন নামে আরও দুইজনকে নিয়োগ দেন লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম।

এদিকে চাকরিটি রাজস্ব করতে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সড়ক ও জনপথ বিভাগে সারাদেশে কর্মরত ২৯৫ জন মাস্টারুলে চাকরিরত কর্মচারী রিট পিটিশন করেছেন (নং-৭৮৬৪/২০১৭)। এতে ইউছুফ ১০৪ নাম্বার বাদী। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সড়ক ও জনপথ বিভাগে মাস্টাররুলে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু ২০১৪ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। কিন্তু পদটি ছিল এইচএসসি সনদের। এতে তার নিয়োগ তারিখটি প্রশ্নবিদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন প্রতারণা বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী। 

অভিযোগ রয়েছে, ইউছুফ লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ী চালক নুরুল আমিনের ছেলে। নুরুল আমিন সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিক সংগঠন জেলা শাখার সভাপতি। নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ী চালক ও সাংগঠনিক পদবীর ক্ষমতাবলে তিনি ছেলে ইউছুফসহ ৬ আত্মীয়কে মাস্টাররুলে চাকরিতে নিযুক্ত করান। এরমধ্যে ইউছুফের চাকরি রাজস্ব করতে ভুয়া তথ্য দিয়ে তিনিই মামলার বাদী করিয়েছেন বলে সড়ক বিভাগে গুঞ্জন রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউসুফ ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সনে শ্যামলী আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা পাশ করেন। এরপর তিনি ২-৩ বছর ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করেন। ২০২২ সালে ‘কাজ নেই মজুরি নেই’ ভিত্তিতে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের লক্ষ্মীপুর উপ-বিভাগে দৈনিক বেতনে কাজে নিযুক্ত হন। পর্যাপ্ত লোকবল থাকলেও নুরুল আমিন তার ক্ষমতাবলে ছেলেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিযুক্ত করিয়ে দিতে সক্ষম হন। এসএসসি পাশ করেই তিনি এইচএসসি পাশের যোগ্যতার পদে নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে। সেই ইউছুফ ২০১৪ সালে কাজে যোগ দিয়েছেন দেখিয়ে চাকরি স্থায়ীকরন করতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। 

বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত মো. ইউছুফের মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সড়ক ভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার জন্য। তিনি এ ব্যাপারে কোন কথা বলবেন না। ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে তার নিয়োগের সত্যতা জানিয়েছেন বলে জানালে’ তিনি কল কেটে দেন। 

ইউছুফের বাবা গাড়ির চালক নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখানে কাজ করি। সেক্ষেত্রে আমার ছেলে ও আত্মীয়-স্বজন অগ্রাধিকার পাবে এটা স্বাভাবিক বিষয়, মিথ্যে বলে যদি একজন শিক্ষিত যুবক সরকারি চাকরি পায়, তাতে বিরোধিতা করা উচিত নয়। 

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি সরকারিকরনে যারা মামলা করেছে তারা অপরাধী। দৈনিক বেতন ভিত্তিক কাজ করা শ্রমিকদের নিয়মিত টাকা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তাও নেই। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্য বা আত্মীয় হওয়ায় কয়েকজন বাড়তি কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। এটি অনেকে সহ্য করতে পারছে না। তাই এনিয়ে অনেকে নানান ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস হল ইউছুফ দৈনিক বেতন ভিত্তিতে কাজ করছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি আমাদের কার্যালয়ে কাজ করছেন বলে কোন তথ্য আমার কাছে নেই। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে কেউ চাকরির জন্য আদালতে মামলা করলে আমাদের কোন দায়ভার নেই। সেই দায়ভার ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।

Powered by