প্রতিনিধি ১৪ মে ২০২৪ , ৪:৪১:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সবজিতে নেই স্বস্তি। মরিচ ও পেঁয়াজের দামে নিরুপায় ক্রেতারা। চলমান ঊর্ধ্বগতি বাজারে কিছুতেই হিসেব মিলছে না মানুষের। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সজিনা, মরিচ, পেঁয়াজ ও বেগুনের দাম। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এখন সকল প্রকার সবজি সহ সজিনা, কাচা মরিচ ও পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন থাকায় ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের। নিরুপায় হয়ে সবজি সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করছেন।
উলিপুর পৌর বাজারের আড়তদার সবজির বাড়তি দামে সজিনা কেজিপ্রতি ১০০ টাকা, মরিচ ৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬০ টাকা, এলছি পেঁয়াজ ৭০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা তা বিক্রি করছেন ১২০ টাকা ও ১০০ টাকা। নানা ভাবে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু ও আদার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। সারা বছর জুড়ে অন্যান্য জেলা থেকে সবজি আমদানি করতে হয় বলে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত হয়ে আসছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে তারা বলেন স্থানীয় ভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া সবজি আমদানি হলে কিছুটা দাম কমতে শুরু করবে।
সরেজমিন মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে উলিপুর সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পাইকারদের কাছে বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ৬২ টাকা তা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, আলু দেশি ৫৬ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, আলু হলান্ড ৪২ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, শসা ১৪ টাকা খুচরায় ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৯০ টাকা খুচরায় ১০০ টাকা, করলা ৪০ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, পিয়াজ এলসি ৬৫ টাকা খুচরা ৭০ টাকা, দেশি পিয়াজ ৬০ টাকা খুচরায় ৭০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা খুচরায় ৩০ টাকা, পটল ৩৪ টাকা খুচরায় ৫০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা খুচরায় ২২০ টাকা, আদা ২৪০ খুচরায় ২৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা খুচরায় ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, ঢেড়স ২৮ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা, ঝিঙা ৩০ টাকা খুচরা ৪০ টাকা, কদোয়া ৪০ টাকা খুচরা ৫০ টাকা, বরবটি ৪৬ টাকা খুচরা ৬০ টাকা, সজিনা ১০০ টাকা খুচরা ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২২ টাকা খুচরা ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ছোট বড় ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা খুচরায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা খুচরা ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা খুচরায় ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।মোগলবাসা থেকে পটল চাষি ইয়াকুব আলী পাইকেরিতে পটল বিক্রি করতে আসা জানান, এবারে এক একর জমিতে পটল চাষ করেছেন। মোট খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এ পর্যন্ত আয় হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। আজ ৭ মণ পটল ১২৮০ টাকা মণ প্রতি বিক্রি করেছি। তিস্তা চরে আলু চাষি আব্দুল মতিন (৬৭) জানান, এবারে আলু চাষ করেছেন প্রায় ১৬ একর জমিতে। একর প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আলুর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। মোট খরচ হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা। আলু পেয়েছি প্রায় ২ হাজার মণ। খরচেরও দ্বিগুণ লাভ হবে।
আজ বাজারে ৫ মণ আলু ১৬৮০ টাকা মণ প্রতি বিক্রি করেছি। খুচরা সবজি বিক্রেতা আব্দুল হাকিম (৬৫), আব্দুর রাজ্জাক (৪৬), নুর ইসলাম (৬৫) ও দুলাল মিয়া জানান, আমরা পাইকারি দামের চেয়ে সামান্য লাভ করেই সবজি বিক্রি করে থাকি। কিছুদিন আগে সবজির বাজার কম ছিল। তাই ক্রেতারা বেশি ক্রয় করত। এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় কম ক্রয় করছেন। এখন স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজির আমদানি না হওয়ায় দাম বেড়েছে বিক্রিও কমেছে। ক্রেতা মফিজল হক (৭০) বলেন, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এটা সম্পূর্ণ কারসাজি। বাজার তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দরদাম সম্পর্কে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ৩০/১২০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই।
খুচরা বাজারে সবজি নিতে আসা গৃহবধূ জেসমিন আক্তার (৪৫), কহিনুর বেগম (৩৪) ও ইউনুস আলী (৬৫) বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে আজ সবজির কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কিছু কিছু সবজির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মরিচ ছিল ৩০ টাকা আজ ৯০ টাকা কেজি, আলু ছিল ৫০ টাকা আজ ৬৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ছিল ৬০ টাকা আজ ৭০ টাকা কেজি, পটল ২০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ১০ টাকা কেজি থাকলেও আজ ৭০ টাকা কেজি, মুলা ২০ টাকা থাকলেও আজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে সবজির দাম অনেক কম ছিল। এ বছর এ সময়ে সবজির দাম অনেক বাড়তে শুরু করছে। এছাড়া মরিচের দাম, সজিনার দাম, পেঁয়াজের দাম ও আদার দাম না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলা খুব কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান তারা।
সবজি বাজারের আড়তদার লাল মিয়া (৭২), আলম মিয়া (৬৫) ও আনারুল মিয়া (৪৫) বলেন, বর্তমান স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি না হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। তাছাড়া সজিনা, আলু, বেগুন ও পেঁয়াজের বাজার বৃদ্ধি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি শুরু হলে কিছুটা কমতে শুরু হবে। এছাড়া আমাদের এলাকায় ধান, পাট, ভুট্টা বেশি চাষাবাদ করা হয়। এ কারণে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে সবজি নিয়ে আসতে হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও থেকে।
তারা আরও বলেন, ওই জেলার মোকাম (পাইকারি বাজার) গুলোতে সবজির দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের এখানে আমদানি কমে যায় ফলে দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া গাড়ি ভাড়ার উপর কিছুটা দাম কম বা বেশি হয়।হঠাৎ সবজির এমন বাড়তি দাম সম্পর্কে কাঁচা বাজারে বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত গরমে সবজির সরবরাহ কম। অনেক ধরনের সবজির মৌসুম এখন শেষের দিকে। ফলে সেসব সবজির দাম বাড়তি। বৃষ্টি নেই বললেই চলে, অতিরিক্ত গরম, এ কারণে সবজি কম হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম আসায় পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি। সে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
তাছাড়া সাজিনা, মরিচ ও বেগুনের বাজার দর বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, মোকামে সজিনা, মরিচ ও বেগুনের চালানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আমারও বেশি দামে বিক্রি করছি বলে জানান তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, এবারে অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে স্থানীয় পর্যায় সবজির চাষে ব্যাঘাত ঘটছে। স্থানীয় ভাবে সবজির আমদানি না হলে বাজারে সবজির মূল্য স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। আরও বলেন, স্থানীয় ভাবে যে সকল সবজি চাষ হয় তাতে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কৃষকদের বেশি বেশি করে সবজি চাষের পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।