আন্তর্জাতিক

এত সেনা কনভয় দেখেনি লাদাখ

  প্রতিনিধি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১১:৫৪:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

লাদাখের সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চুমাথাঙে থাকেন সোনম দোর্জে। সরকারি নির্দেশে গ্রামে মোবাইল বন্ধ। কাজের জন্য লেহ শহরে এসেছিলেন। শুকনো মুখে বললেন, ‘এই সময় টুরিস্টের গাড়ি আসা-যাওয়া করে। এ বার শুধু সেনার কনভয়। এরকম অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। আমাদের ব্যবসাপাতি সব বন্ধ!’

চিনের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনায় শিরোনামে গলওয়ান, প্যাংগং। দু’টি এলাকাই চুসুল কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ১২টি গ্রাম, মেরেকেটে আড়াই হাজার লোকের বাস। লেহ অটোনমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের অন্তর্গত চুসুল কেন্দ্রের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলর কনচক স্ট্যানজিন বিজেপির প্রতিনিধি। নিজেই বলছেন, ‘আমার এলাকার কথা সরকার ভুলেই গিয়েছিল। চিনের সঙ্গে গোলমাল শুরু হওয়ার পর এখন রাস্তা ঠিক করার কাজ হচ্ছে! যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নতুন রাস্তাও তৈরি হচ্ছে।’ ২৮ অগস্ট চুসুলে গিয়েছিলেন কনচক। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘বিপুল সংখ্যক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ট্যাঙ্ক ঘুরছে।’

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া কাকজুং, তুম সেলে, চুমার, ডেমচক, করজকের বাসিন্দাদের সংসার চলে পশুপালন করে। সীমান্তের আশপাশেই ছাগল, ভেড়া চড়াতে বেরিয়ে পড়তেন গ্রামবাসীরা। এখন সে সবও বন্ধ। সেনাবাহিনীর অনুমতি নেই।

অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেহ-লাদাখে ভরা মরসুম। কাশ্মীরে বড়সড় অশান্তি না থাকলে শ্রীনগর থেকে লাদাখের পথে রওনা দেন বহু পর্যটক। করোনাভাইরাস সংক্রমণ তো রয়েছেই, চিনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে পর্যটকদের ঢোকা বারণ। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সাংবাদিকদের উপরেও। গলওয়ান-পরবর্তী সময়ে যে ক’জন সাংবাদিক লাদাখে গিয়েছেন, বেশিরভাগই দিল্লি থেকে বিমানে সরাসরি লেহ-তে গিয়েছেন। কিন্তু সীমান্তের গ্রামে পৌঁছনোর অনুমতি নেই কারও।

নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে তাই নিজের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সুযোগ ছিল না। শ্রীনগর থেকে বেরোনোর পর প্রথমে আটকানো হয় সোনমার্গের আগে, তার পর দ্রাস, কার্গিল, একেবারে শেষে লেহ-তে ঢোকার ৫০ কিলোমিটার আগে। সবমিলিয়ে চার বার। পুলিশের অনেক প্রশ্ন। আপনি কি সাংবাদিক? কার কাছে যাচ্ছেন? আত্মীয় বা পরিচিত হলে তাঁর সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলাতে হবে। এতটাই কড়াকড়ি!

শ্রীনগর থেকে লেহ- রাস্তা একেবারে ফাঁকা। শুধু সেনার কনভয়, একের পর এক। লেহ শহর সুনসান। যেন অনন্ত লকডাউন চলছে! আবহাওয়া ভালো। কিন্তু মন খারাপ স্থানীয়দের। বছর তেতাল্লিশের ডেলেক নামগিয়ার পর্যটনের ব্যবসা করেন। ফাঁকা দোকানে বসে বললেন, ‘সীমান্তে টুকটাক ঘটনা লেগে থাকত। এরকম বাড়াবাড়ি কখনও দেখিনি। আমাদের সব ব্যবসা পণ্ড।’ গত বছর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা পাওয়ায় লাদাখের উন্নতির আশা করেছিলেন অনেকে। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কাশ্মীরের মতো বিতর্কিত এবং সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে লাদাখ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই ত্রাসের ছবি বরাবরের সঙ্গী না হয়ে যায়!

সোমবার সন্ধ্যায় ৪৫ বছর পর ভারত-চিন সীমান্তে প্রথম গুলি চলেছে। ভারতীয় সেনা তৎপর থাকায় চিন বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। প্যাংগংয়ের দক্ষিণ ভাগে রেজাং লা, রেকিং লা এলাকায় বেশ কয়েকটি উঁচু পাহাড় দখল করে বসে আছে ভারত। চিন যে তার প্রত্যুত্তর দেবে, সীমান্তে আরও আগ্রাসী হচ্ছে লালফৌজ, সে খবর প্রতিনিয়ত পৌঁছচ্ছে লেহ শহরে। তত বাড়ছে দুশ্চিন্তা। সামনেই শীত। বড়জোর অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় পাবে ভারতীয় সেনা। তার পরই প্রবল তুষারপাতের জন্য পিছিয়ে আসতে হবে। তাই আগামী কয়েকদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেহ-র তিব্বতি কলোনির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান চেতা অ্যাংচক নিজে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ডিউটি দিয়েছেন। কখনও এমন উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। গর্ব করে বললেন, ‘চিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিব্বতি সদস্যরা সামনে থেকে লড়ছে। গত সপ্তাহে একজন মৃত্যুবরণও করেছেন। এ বার আমরা মাটি কামড়ে পড়ে আছি। সহজে গোলমাল মিটবে না।’  – EiSamay.Com

আরও খবর

Sponsered content

Powered by