বাংলাদেশ

কর্ণফুলীর গহীনে আলোর ঝিলিক

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২২ , ৬:১০:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নয়নের চ্যানেল হিসেবে ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প সংযোগ সড়কে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের বিটুমিন

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

কর্ণফুলী নদীর গহীনে পড়েছে আলোর ঝিলিক। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ঘিরে বেড়েছে উচ্ছ্বাস। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের এই মেগা প্রকল্পটি। শুধু নদীর তলদেশে নয়, দুই পারেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ধানি জমির বুক চিরে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। টানেল ঘিরে নির্মিত সড়কে বিটুমিনের প্রলেপ। তাতে রোদের ঝিকিমিকি খেলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টানেল হবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চ্যানেল। বাড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। খুলে যাবে পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার।

প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যে কোনো জলোচ্ছ্বাসের পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য টানেলের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে লোহার গেইট। ভেতরে লাগানো হয়েছে সমান্তরাল বাতি। টিউবের ভেতরে গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা হচ্ছে পিচঢালা সড়ক। দেওয়া হচ্ছে সিমেন্টের প্রলেপ। সংযোগ সড়কে এরই মধ্যে চারটি প্রলেপ দেওয়া শেষ। নিচের দুই লেয়ারে ব্যবহার হয়েছে ৬০-৭০ গ্রেড এবং ওপরের দুই লেয়ারে মডিফাইড বিটুমিন। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মেগা প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে বসুন্ধরা বিটুমিন। টানেলের ঠিক পাশের সড়কেই বিটুমিনের মিক্স প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পার থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের সংযোগ আরও গতিশীল করতেও কাজে আসবে টানেলটি। চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে সরাসরি টানেলে প্রবেশ করা যাবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের যানজট থেকেও মুক্তি মিলবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। তবে দুটি টিউবের প্রতিটি দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যস ১০. ৪০ মিটার। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের এই টানেল। যেটি নির্মাণ হলে চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হবে আনোয়ারা। আর দুয়ে মিলে পরিণত হবে ওয়ান সিটি টু টাউনে।

 

 

 

কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনাকালে সবকিছু স্থবির থাকা সত্ত্বেও একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি এখানকার কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে দুটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে টিউবের প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীন নির্মাণ কাজগুলো চলমান রয়েছে। লেন স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজও প্রায় শেষ। টানেলের দুটি টিউবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট কাস্টিং, যেগুলো বানানো হয় চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়াং শহরে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ৮১ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্টের ডেক স্লব ও পেভমেন্ট নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। টাগ বোটের নির্মাণ কাজও শেষ। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে এই সড়কে বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, প্রায় এক বছর ধরে সড়ক তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্পের ইতিবাচক দিক হলো, এর মেয়াদ এবং ব্যয় কোনোটাই বাড়ানোর দরকার হয়নি। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগেই টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। কাজের গতি বাড়াতে বৃদ্ধি করা হয়েছে জনবল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। করোনা মহামারীর মধ্যেও সমানতালে চলেছে টানেলের কর্মযজ্ঞ।

তিনি বলেন, বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজ দুটি টিউব খনন সম্পন্নসহ টানেল প্রকল্প অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হয়েছে।এ কারণে সময়ও লেগেছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। তার পরেও প্রত্যাশিতভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে এবং প্রকল্প কাজ সম্পন্নের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

প্রায় দেড় দশক আগে চট্টগ্রামে এক জনসভায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সই হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by