চট্টগ্রাম

কাউন্সিলররা না থাকায় সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তিতে দোহাজারী পৌরবাসী

  প্রতিনিধি ৯ অক্টোবর ২০২৪ , ৫:৫৫:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

কাউন্সিলররা না থাকায় সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তিতে দোহাজারী পৌরবাসী

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে সারাদেশের ৩২৩টি পৌরসভার মেয়রদের অপসারণপূর্বক প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করে। মেয়র না থাকলেও প্রশাসকের সাথে পৌর কাউন্সিলরগণ সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে পৌরসভার কাজ তরান্বিত করছিলো। কিন্তু গত ২৬ সেপ্টেম্বর সারাদেশের পৌরসভার কাউন্সিলরদেরকেও অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

পরবর্তীতে উপজেলা সদরে স্থিত পৌরসভা ও উপজেলা সদরে স্থিত পৌরসভা ব্যতিত অন্য পৌরসভায় কাউন্সিলরগণের স্থলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রদান করে পৌর-১ শাখা থেকে ওই দিন আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উপজেলা সদরে স্থিত পৌরসভা ব্যতিত অন্য পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সমবায় অফিসার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী/উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় বুধবার (৯ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাউন্সিলরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তাগণ গত ২৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অদ্যাবধি দোহাজারী পৌরসভায় কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। এদিকে কাউন্সিলর না থাকায় জন্ম, মৃত্যু, নাগরিকত্ব, চরিত্র, ওয়ারিশ, ভূমিহীন, পারিবারিক, নতুন ভোটার ও ভোটার স্থানান্তরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সনদ পেতে দোহাজারী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ জনগনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তা, ড্রেন উন্নয়ন, সড়ক বাতির ব্যবস্থা, রাস্তা ঝাড়ু ও ড্রেন পরিষ্কার রাখা, মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং প্রাথমিকভাবে বিবাদ মেটানোর কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে।

৭নম্বর ওয়ার্ডের রায়জোয়ারা এলাকা থেকে দিদার নামে একজন সেবাপ্রার্থী গত চার দিন ধরে পৌরসভায় আসছেন তার মা সেকুন্তাজ বেগমের মৃত্যু সনদের জন্য। তবে, গতকাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ তাকে নিশ্চিত করতে পারেননি, তিনি তার সনদ কবে পাবেন। যেহেতু তার মায়ের নামে কোন এনআইডি হয় নাই। এনআইডি হওযার আগে তার মা মৃত্যুবরণ করেছেন, সেহেতু তার মায়ের জন্ম-মৃত্যু তারিখ সঠিক কিনা সেটি কোর্ট থেকে এফিডেভিট আনার পরামর্শ প্রদান করেন পৌর কর্তৃপক্ষ।

দিদার বলেন, মৃত্যু সনদ এতোদিন পর্যন্ত স্থানীয় কাউন্সিলর দুইজন সাক্ষীর সাক্ষরে এবং পরিবারের একজনের তথ্যমতে কার্টিস পেপারে প্রত্যয়ন প্রদান করতেন। এখন কোর্ট এফিডেভিড করার জন্য এডভোকেট নিযুক্ত করতে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া-আসার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে আমাকে।

৬নম্বর ওয়ার্ডের জামিজুরী এলাকার বাচা মিয়া নামে একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, আমি ওয়ারিশ সনদের জন্য গেলে আমাকে বলা হয়  এখনো কাউন্সিলরের কাঠামো হয়নি। কাঠামো ঠিক হলে আমার আবেদনটি জমা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শুধু দিদার আর বাচা মিয়া নন, দোহাজারী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নাগরিকরাও জন্ম, মৃত্যু, নাগরিকত্ব, চরিত্র, ওয়ারিশ, ভূমিহীন, পারিবারিক, নতুন ভোটার, ভোটার স্থানান্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সনদ পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর বলেন,

ঢালাওভাবে কাউন্সিলরদের অপসারণ না করে অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে জড়িত নন এবং ভালো ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন, তাদের কাউন্সিলর হিসেবে রাখা যেতে পারত। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের যে ৬ জন  সরকারি কর্মকর্তাকে কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁরা তৃণমূল পর্যায়ের নাগরিকদের সাথে কিভাবে কাজ করবেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকারের সেবা বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক বলেন, দোহাজারী পৌরসভাসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা। উক্ত রোহিঙ্গারা দোহাজারী বার্মা কলোনিসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাস করলেও এরা চট্টগ্রাম শহর এবং রাঙ্গুনিয়া থেকে সুকৌশলে এনআইডি বানিয়ে ফেলেন। এরা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার জন্য গেলে কাউন্সিলরগণ এদেরকে প্রতিহত করতো। তাছাড়া তিন পুরুষ আগে যাদের জন্ম পরিচয় সঠিক ছিলোনা তারা ওয়ারিশ সনদ নিতে পারে নাই। কাউন্সিলর না থাকার সুযোগে এরাও ওয়ারিশ সনদ নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। এবিষয়ে উক্ত রাজনীতিবিদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে রোহিঙ্গারা এখানে পুনরায় নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অবৈধগণ বৈধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে যায়গা সম্পত্তি নিয়ে মারামারি মামলা মোকদ্দমা শুরু হবে। এছাড়া রোহিঙ্গারা এনআইডি বানানোর সুযোগ পেলে তা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।

এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডিপ্লোমেসি চাকমা বলেন, “কাউন্সিলরের দায়িত্ব প্রাপ্ত ৬ জন সরকারি কর্মকর্তাগনের মধ্যে কাকে কোন ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হবে তা আজ (বুধবার, ৯ অক্টোবর)  অফিস অর্ডার করে পৌর কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত কর্মকর্তারা সপ্তাহে একদিন পৌরসভা কার্যালয়ে এসে দায়িত্ব পালন করবেন। জরুরি কোন সেবার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রার্থী উক্ত কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে সেবা নিতে পারবেন।”

আরও খবর

Sponsered content