প্রতিনিধি ২২ মে ২০২০ , ৭:২১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
এসএম ওমর আলী সানি, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ পালরদী মহল্লার আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অস্ত্রপাচারের (সিজার) সময় আফরোজা আক্তার মুন্নী (২৩) নামের এক প্রসূতি ও তার গর্ভজাত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানা পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে মৃতার স্বামী কুদ্দুস তালুকদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। ক্লিনিকের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অজয় হালদার ও অপারেশন থিয়েটারের সহযোগি রিপন মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর পরই ক্লিনিক থেকে পালিয়ে গেছে আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক কথিত চিকিৎসক হেদায়েত উল্লাহ ও গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদ মো: আমরুল্লা।
গৌরনদী থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মাহাবুবুল রহমান মামলার বরাত দিয়ে জানায়, বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের দত্তেস্বর গ্রামের কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী আফরোজা আক্তার মুন্নী (২৩) প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পর সিজার অপারেশনের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে গৌরনদী আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। বিকেলে অস্ত্রপাচারের (সিজার) অপারেশনের জন্য গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদ মো: আমরুল্লা ও অজ্ঞান ডাক্তার হিসেবে উপস্থিতি হেদায়েত উল্লাহ ওই প্রসূতিকে ভুল এ্যানেসথেসিয়া পুশ করার সাথে সাথেই প্রসূতি গৃহবধুর মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ধামাচাঁপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা খারাপ বলে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানোর জন্য এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে।
মৃত্যু প্রসূতি স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন থিয়েটারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে সন্ধ্যায় তার (গৃহবধূ) স্বজনরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরপূর্বে হেদায়েত উল্লাহসহ অন্য গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদ মো: আমরুল্লা চিকিৎসক কৌশলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতে মৃত গৃহবধু আফরোজা আক্তার মুন্নীর লাশ উদ্ধার করে। তখন ক্লিনিকের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অজয় হালদার ও অপারেশন থিয়েটারের সহযোগি রিপন মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করে। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদ মো: আমরুল্লা প্রভাবশালী হওয়াতে স্থানীয় একটি মহল বিষয়টি ধামাচাঁপা দিয়ে চিকিৎসককে রক্ষার জন্য ওইমহলটি জোর প্রচেস্টা অব্যাহত রেখেছে।
গৌরনদী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম ছরোয়ার সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় মৃত গৃহবধূর স্বামী কুদ্দুস তালুকদার থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১২,( ২১ মে ২০২০ইং)। মামলার দুজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার কৃতদের বরিশাল আদালতে পাঠানো হবে। লাশ পোসমডেমের জন্য বরিশাল শের–ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারের অভিজান চলছে। মামলা তদন্তধিন রয়েছে।
স্থানীয়একাধিক সূত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকশর্তে জানান, হেদায়েত উল্লাহ একজন ফামাস্টিস হয়েও নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। গত বছরের মে মাসে অপচিকিৎসার অভিযোগে হেদায়েত উল্লাহ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো। বেশ কিছুদিন সে কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে পূর্ণরায় অপচিকিৎসা শুরু করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে মালিক হেদায়েত উল্লাহ পলাতোক থাকায় তার সাথে যেগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদ মো: আমরুল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি অস্ত্রোপচারের জন্য গিয়েছিলাম সত্য। হেদায়েত উল্লাহ রোগিকে অ্যানাস্তাসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে। ওই রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমি অস্ত্রোপচার করি নাই।
এব্যাপারে বরিশাল সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি বিষটি শুনেছি । আমার কাছে কেহ লিখিত ভাবে জানালে আমি বিষয়টি দেখবো। আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা নাই, অফিসের ফাইল না দেখে বলা যাবে না।