প্রতিনিধি ২৭ নভেম্বর ২০২৪ , ৬:১৩:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
হিন্দু মৌলবাদি সংগঠন ইসকনের হামলায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের তিনদফা জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। নগরীর দুই জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছে। সকালে আদালত প্রাঙ্গনে প্রথম জানাজা এবং জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে বিকেল ৪টায় লোহাগাড়ার চুনতি ফারেঙ্গায় তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৯টার পর থেকে নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকে ওয়াসা মোড়ের জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে। অনেককে ট্রাক-বাসে করে জেলা-উপজেলা থেকে আসতেও দেখা গেছে। ১১টা বাজতেই জনতার ঢল নামে ওই ময়দানে।
জানাজায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ অংশ নেন। ওই জানাজায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর জামাতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, রাসেল আহমদ, সহ সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিসহ রাজনীতিবিদ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
নামাজ শেষে উপস্থিত জনতা অবিলম্বে আলিফের খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানান। এছাড়া ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন জনতা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম (৩৫) হত্যার শিকার হন। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সাইফুলকে হত্যার অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩০জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে জানাজা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা ভুলে যাই নাই আওয়ামীলীগের সহায়তায় এই ইসকন কীভাবে গত ১৬ বছর পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠে আজকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে স্বৈরাচারের সঙ্গী হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই ভারতের বুবু, ভারতের হাসিনা এই বাংলাদেশে তোমার আর ঠাঁই হবে না। ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করা হয় আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিবো। আমাদের দেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। আমরা সবার অধিকার রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করবে, সেসব উগ্রাবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না। জঙ্গী ইসকনকে বিতাড়িত করা হাতের ময়লা বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।