প্রতিনিধি ২২ মে ২০২১ , ৭:৪৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
সুন্দরবনের খাল ও নদীতে কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকার কিছুতেই থামছে না। জেলে নামধারী সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা নানা ছত্রছায়ায় সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ নিধনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর তাদের এ কাজে সহায়তা করছে বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রার জোড়শিং, পাতাখালি, গোলখালি, আংটিহারা, ৬নং কয়রা, পাথরখালি, মঠবাড়ি ৪নং কয়রা, তেতুলতলাচর, শেখেরকোনা, কালিবাড়ি, মহেশ্বরীপুর, বানিয়াখালি, হড্ডা, দাকোপ, সুতারখালি, কালাবগিসহ স্থানীয় শতাধিক জেলে গোনের শুাংতে ঘন ফাঁসের চরপাতা জালের পাস পারমিট কিংবা বিনা পারমিটে মরা গোনে নিষিদ্ধ ভেষালি জাল নিয়ে বনের গহীনে যায়।
প্রবেশের সময় তারা নৌকায় বিষাক্ত রিপকর্ড বিষ নিয়ে যায়। জোয়ারের কিছু আগে চিড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে পানিতে ছিটিয়ে দেয়। বিষের তীব্রতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই এলাকায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিস্তেজ হয়ে ভেসে উঠে। এসময় চাকা ও চালি চিংড়িসহ বড় বড় মাছগুলো শিকার করে লোকালয়ে সরবরাহ করা হয়।
এসব মাছ কয়রায় স্থানীয় ডিপো, মাছ ব্যবসায়ী, দেউলিয়া বাজার মৎস্য আড়ৎ, ফুলতলা মিনি আড়ৎ ও চাঁদালি মৎস্য আড়তে নিয়মিত বিক্রি হয়। সম্প্রতি ৬নং কয়রা এলাকা থেকে পুলিশ সুন্দরবনে কীটনাশক দিয়ে শিকার করা ১২০ কেজি চাকা চিংড়িসহ তিন জেলেকে আটক করে।
তবে প্রশাসনের এমন অভিযান নিতান্তই অপ্রতুল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিষাক্ত ওই পানি পান করে বাঘ, হরিণ, বানরসহ বন্য প্রাণীর জীবননাশের শঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া উপকূলের মানুষের পানীয় জলের উৎসগুলোও বিষাক্ত জেলে নামধারী এসব দুর্বৃত্তরা স্থানীয় মৎস্য আড়ৎদার, দাদনদাতা ও প্রভাবশালীদের লোক। মূলত অধিক মুনাফার লোভে জেলেদের মোটা অঙ্কের দাদন দিয়ে তারা এ কাজ করান। তাদের সহায়তা করেন বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলা সদরের লোকালয় গড়ে ওঠা অবৈধ শুটকি ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের দাদনের সঙ্গে জেলেদের হাতে তুলে দেন কীটনাশক। এর মাধ্যমে তারা একদিকে ধ্বংস করছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ, অন্যদিকে বিষাক্ত চিংড়ি শুকানোর কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ করে তুলেছে জনজীবন। এদিকে, পশ্চিম সুন্দরবনের অভয়ারণ্যাঞ্চল গেওয়াখালি, ভোমরখালি, পাথকস্টা, আদাচাকি, ছিচখালি, নীলকমল, পুস্পকাটি, নোটাবেকি, শাপখালি, আগুন জ্বালাসহ অন্যান্য নদী, খাল থেকে দাদন বা বিনা দাদনভুক্ত জেলেদের ধরা বিপুল পরিমাণ চিংড়ি ও সাদা মাছ দাকোপ, কয়রা, শ্যামনগর ও আশাশুনির অর্ধ-শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে মোকামে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ওইসব মাছের বেশিরভাগ বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত এবং কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, কতিপয় অসাধু বনরক্ষীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অভয়ারণ্যে অবাধে কীটনাশক প্রয়োগে মাছ, কাঁকড়া আহরণ করা হয়। সুন্দরবন খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের বজবজা, খাসিটানা, পাথকস্টা, গেওয়াখালি, নীলকমল, নোটাবেকি, পুস্পকাটি, টেংরাখালি টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনরক্ষীরা উৎকোচের বিনিময়ে জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ দিচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ ব্যপারে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধে জোর চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ শুটকি স্থাপনা খুব দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।