দেশজুড়ে

দখল ও নাব্য সংকটে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বড়াল নদী

  প্রতিনিধি ২৪ মে ২০২১ , ৬:৫৬:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

ময়েন উদ্দীন পিন্টু, চারঘাট (রাজশাহী) :

নাব্য হারিয়ে ধুকছে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদী। বড়াল নদীর মোহনায় সরকারী জমির অবৈধ দখল ও ভরাট করে বালু সংরক্ষণের জায়গা ও বালু বহনে ট্রাক যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরি ও নদীর মোহনা তীরবর্তী জায়গায় বালু উত্তোলনের ফলে পাড়ের লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে উচু হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। আর এতে পদ্মা নদী হতে বড়াল নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ যেমন বিঘ্ন হচ্ছে তেমনিই নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এককালের ক্ষরস্রোতা এই বড়াল নদী।

নদী সংশ্লিষ্টদের অভিমত, জরুরি ভিত্তিতে নদীর মোহনায় খনন কাজ না করা হলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদীটি।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কোলঘেষে প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী ১ শত ৪৭ কি.মি. লম্বা ও ৪১০ ফুট প্রশস্ত বড়াল নদীটি রাজশাহীর চারঘাট হয়ে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা হয়ে যমুনা নদীর সাথে মিশেছে।

এই নদীতে সারা বছর নৌকা চলতো, মাছ পাওয়া যেত, পানি টলটল করত। এখন মূলত বর্ষাকালে দুই-তিন মাস পানি পদ্মার পানি প্রবাহের মাধ্যমে এই নদীতে পানি থাকে।

আর বাকি মাসগুলোতে পানি শুকিয়ে থাকে। পানি না থাকায় এই নদীতে আর নৌকা চলে না। স্থানীয় লোকজন বর্তমানে এই শুকনো নদীতে বিভিন্ন শস্যের চাষাবাদ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে প্রমত্তা পদ্মানদী বর্ষা মৌসুমের কয়েকমাস নেপালের হিমালয় থেকে বয়ে আনা পলি মাটি ও পদ্মার উত্তোলনকৃত বালু বড়াল মোহনায় সংরক্ষণ করছেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। পানি প্রবাহে বিঘ্ন হওয়ায় নাব্য হারিয়ে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে এবং হারিয়ে গেছে নদীর সৌন্দর্য। এছাড়াও এই নদীটির মোহনা থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছে একটি স্লুইসগেট, যার সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এই স্লুইসগেটটি উঠিয়ে দিয়ে পানির সুষ্ঠ প্রবাহ বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করলেও স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে কোন সুষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। দখল আর নাব্য সংকটে ধুকতে থাকা বড়াল নদীটি দিন দিন সরু খালে পরিণত হচ্ছে। তাই নদীকে রক্ষার বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।

বড়াল নদীর এই দুর্দশার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। হারিয়ে যেতে থাকা এই নদীর প্রাণ ও নাব্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য খননকাজ শুরু করে ও দখলমুক্ত করতে প্রশাসনকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান ।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, পদ্মা-বড়াল নদীর মহনায় খনন করে নদীটির নাব্য উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে ব্যপক কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে এবং খুব দ্রুতই এর বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content