রংপুর

দশমাইল কলার হাটে জমজমাট ব্যবসা

  প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৪ , ৬:২২:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

দশমাইল কলার হাটে জমজমাট ব্যবসা

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার উৎপাদিত সাগর কলার খ্যাতি দেশজুড়ে। শুধু সাগর কলা নয়; সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চম্পা কলারও চাষ হয় এখানে। আর কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। এই হাটে এখন চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকারদের ব্যস্ততা।

মূলত কলা চাষের উপযোগী উঁচু জমি থাকায় দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় এই ফলের উৎপাদন বেশি। এ ছাড়া আবাদে পরিশ্রম কম এবং ন্যায্য দাম পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষে। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার সব কটি ইউনিয়নেই কলা চাষ হয়। তবে প্রায় ৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় কাহারোল উপজেলা। শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত ফল তোলার সময়।

এই সময় দশমাইল এলাকায় বসে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় কলার হাট। ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ব্যাপারীরা কলা কিনতে আসেন এখানে। ভোর পাঁচটা থেকে ভ্যানে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। এই হাটে স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী আছেন দেড় শতাধিক।

হাটের বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীদের সঙ্গে চলে দর-কষাকষি। কেনাবেচা শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে কলা তোলা হয়। সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কারবার। সোমবার সকালে কলার হাটে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকারদের। মাঠজুড়ে সারি সারি সাজানো কলার কাঁদি। স্থানীয়ভাবে কলার কাঁদিকে কেউ বলে কাইন, ঘাউর, ঘের, পীর। প্রতিটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকা দরে। ব্যাপারীরা জানান, গেলবার প্রতিটি কলার কাঁদি কিনেছেন ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কাঁদিপ্রতি দম ১০০ টাকা বেড়েছে।

কাহারোল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩ শত ৩০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়ছে। কলার দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরাও।

উপজেলার কলাচাষি নুরুল আমিন বলেন, ‘কলা চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। গেলবার ২০০ গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। এবার সেখানে ৫০০ গাছের বাগান করেছি। বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ২ লাখ টাকার কলা বিক্রির আশা করছি।’ তিনি জানান, কলার বাগানে যে খরচ হয়েছে, বাগানের ভেতরে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ থেকেই সেটা উঠে এসেছে।

কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের কৃষক রঞ্জিত রায় বলেন, কলা বিক্রি করতে হাঁটে আসতে হয় না। পাইকারেরা আগেই টাকা দিয়ে দেন। হাঁটে আনলে খাজনা দেওয়া, পরিবহন খরচসহ পড়তা করা যায় না। তাই ব্যবসায়ীদেরই দিয়ে দিই, বিক্রির ঝামেলা থাকে না। তিনি জানালেন এবার, ৪০০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন তিনি।

হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। শতাধিক ব্যাপারী কলা কিনতে আসেন। প্রতিদিন ২৫-৩০টির বেশি ট্রাকে কলা নেওয়া হয়। একটি ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০০-৯০০ কাঁদি কলা ধরে। অর্ধশত শ্রমিক শুধু ট্রাকে কলা তোলার কাজ করেন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার কলার আমদানি কম। তিনি বলেন, ভুট্টার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কলার আবাদ কিছুটা কমেছে।

কাহারোল উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মরিøকা রানী শেহানবীশ উপজেলায় প্রায় ৩ শত ৩০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলার হাট দশমাইল হাট। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার উৎপাদিত সাগর কলা ঘ্রাণে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় এবং মৌসুমের শুরুতে এবার চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেশি। কলা চাষে খরচ কম। ঝুঁকি ও রোগবালাইও কম। তাই কলা চাষ জনপ্রিয় হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content