প্রতিনিধি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৭:৪৯:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ প্রায় ১ মাস পর নবজাতক শিশু ফিরে এলো মমতাময়ী মা রত্নার কোলে। গুলিবিদ্ধ বাবা আব্দুর রশিদ আবেগাপ্লুত হয়ে নবজাতক শিশুকে বার বার আদর ও চুমু খাচ্ছিলো। কোলে নিতেই মনে হয়েছিল যেন সে আকাশের চাঁদ ফিরে পেলো। দিনাজপুর জেলা প্রশাসনসহ সরকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই ছিল শত শত এলাকাবাসীর মধ্যে ছিল আনন্দ ও উৎসবের ফোয়ারা।
ঘটনা বিবরণে জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট আব্দুর রশিদ গর্ভবতী স্ত্রী রত্নাকে নিয়ে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এ সময় টিকিট কাটতে গিয়ে ছোররা গুলিতে নাভির নিচে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় আব্দুর রশিদ। তরিঘড়ি করে বাড়ীতে চলে আসে। ৯ আগষ্ট প্রচন্ড ব্যাথায় ছটফট করলে গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য বলেন। অপারেশন করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আহত আব্দুর রশিদের মা ১৭ হাজার টাকা দেয়। তাতেও সমস্যা কাটেনি।
ঠিক এই মুহুর্তে ১১ আগষ্ট স্ত্রী রত্না ফুটফুটে এক শিশু সন্তানের জন্ম দেয়। চরম হতাশায় পড়ে যায় স্ত্রী রত্না। এক দিকে স্বামী মৃত্যুশয্যায় অপরদিকে নবজাতকের জন্ম। এখন উপায় কি। উপায়ন্তর না পেয়ে নিঃসন্তান এক দম্পত্তি খুশি করে রত্নাকে স্বামীর চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা দেয়। চিকিৎসকরা ৯টি গুলি বের করে। আব্দুর রশিদ ও স্ত্রী রত্নার কাজ থেকে নিঃসন্তান দম্পত্তি তার সেই ৩ দিনের নবজাতককে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যায়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। একই অপারেশনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ১০ হাজার টাকা দেন। এই টাকা দিয়েই গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদের অপারেশন হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে নবজাতক শিশু সন্তানকে পিতা-মাতার কোলে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের একটি গাড়ীতে নবজাতকের মাতা রত্নাসহ প্রশাসনের লোকজন শিশুটিকে আনার জন্য কুড়িগ্রামে যায়। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টা দিকে রাজবাটী এলাকায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ জ্বালিয়ে (তার বাসায় বিদ্যুৎ লাইন নাই) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহাগ চন্দ্র সাহা নবজাতক সন্তানকে তার মা রত্নার কাছে তুলে দেয়।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান, এসিল্যান্ড আব্দুর রহিম, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ হোসেন, শহর সমাজসেবা অফিসার আসাদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী একরামুল ইসলাম আবীর ও মো. আলীসহ এলাকার শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের জানান, নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে নেয়া ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী রত্নাকে নগদ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়াও যাবতীয় চিকিৎসার খরচ প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য, আব্দুর রশিদ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র।