প্রতিনিধি ৪ জুন ২০২৪ , ৫:৫১:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে যারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান (মুক্তিযোদ্ধা) হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এখনও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি চট্টগ্রাম পাহাড়তলীর ১২নং সরাইপাড়ার মো. ইসমাইল (৭৯)।
তিনি চট্টগ্রাম পাহাড়তলীর উপজেলার সারাইপাড়া গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের ছেলে। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মান না পাওয়ায় দুঃখ পাচ্ছেন তার সহকর্মী অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও। মো. ইসমাইল জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ গ্রুপ কমান্ডার অলীউর রহমান, লোহার বন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লুৎফুর রহমান।
তার মুক্তিযোদ্ধা নং-১০২১০। মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবির হালিশহর রঙ্গীপাড়া, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। প্রশিক্ষক মৌলভী সৈয়দ আহাম্মদ-এর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মো. ইসমাইল সীমান্ত পেরিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের বেশ কিছু ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক ডিজি নম্বর-১৭৯৫৮০ তারিখ-১৬-০৭-২০১৪ এবং ভারতীয় নং-২১৬২০৫।
বারবারই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক যাচাই বাছাই জটিলতার কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। তিনি বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়ার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়নি।
তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। নিজ গ্রামের মানুষসহ উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা মো. ইসমাইলকে মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও কাগজে-কলমে তার স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫২ বছরেও। মো. ইসমাইল আক্ষেপ করে বলেন, দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।
স্বপ্ন ছিল দেশকে স্বাধীন করব। সে স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিলেও আমাকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটন আর রোগ-শোক আজ আমার নিত্যসঙ্গী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অমর হয়ে আছেন।
আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবহেলা, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতেন না। আমি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত টাকা পয়সা কম খরচ করেনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময়ও আবেদন করেছি।
তবে এত দিনেও ভাল-মন্দ কিছু জানা যায়নি। মৃত্যুর আগে স্বীকৃতি পাবো কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। তবে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই হলে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাবো বলে আমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি বড় করে দেখছিনে, জীবনের শেষপ্রান্তে হলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই।
আমি আশা করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আস্থার প্রতীক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। আজ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে-অর্ধাহারে বিনা চিকিৎসায়, বাসস্থানহীন অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মো. ইসমাইল বলেন, নানা কারণে আজও তার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। তাই মারা যাওয়ার আগে তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চান।