প্রতিনিধি ১২ মে ২০২৪ , ৫:৪১:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম নগরীতে নির্মিত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষ হয়ে এখন উন্মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ এক্সপ্রেসওয়ের নাম দেয়া হয়েছে “এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে“। র্যাম্প ছাড়া ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মূল সড়কের কাজ শতভাগ শেষ। তাই শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বর্তমানে এটিতে পোল লাগানো হচ্ছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, “লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সি-বিচ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় এখন দৃশ্যমান। এটিতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যানবাহনের টোলের হার অনুমোদন দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ যান চলাচল শুরু হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা রাখা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। এখানে নিরাপত্তার জন্য বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্পিড ক্যামেরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। নির্ধারিত গতির চেয়ে যারা কম বা বেশি চালাবে সেসব যানবাহনগুলোকে অটোমেটিক স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে।”
সরেজমিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা গেছে, চার লেনের দুটি সড়কের একপাশ পুরোপুরি প্রস্তুত। আরেক পাশের কাজ কিছুটা বাকি আছে। বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক পোল। তাতে লাগানো হবে বাতি। এখনও শুরু হয়নি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্পিড ক্যামেরা লাগানোর কাজ। এ সড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
টোলের বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করলে কার ১০০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ৩০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে। এ সড়কে মোটরসাইকেল, ট্রাক (৬ চাকা) এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করলে যানবাহনকে নির্ধারিত হারে টোল দিতে হবে। এখানে টোল নেওয়ার জন্য ১৪টি টোল বুথ থাকবে। প্রাথমিকভাবে পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি টোল বুথ থাকবে। র্যাম্প নির্মাণের পর বাকি টোল বুথ বসানো হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এই টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এখনও টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩,২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র্যাম্প থাকবে। তার মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি, সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে একটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।