রংপুর

নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কর্মসৃষ্টিতে নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামের হস্তশিল্প

  প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৩:২৮:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কর্মসৃষ্টিতে নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামের হস্তশিল্প

কুড়িগ্রমের উলিপুরে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় অসহায় দারিদ্র নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার নামের একটি হস্তশিল্প কারখানা। ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা জাকিয়া শাহারুদ খান রুনা প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকার হতদরিদ্র অসহায় বিধবা নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাশির পাতার নামক এলাকায় ক্রয়কৃত নিজস্ব জায়গায় কারখানাটি গড়ে তুলেন। ২০২০ সাল থেকে কার্যক্রম চলে আসা কারখানাটিতে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক কাজে নিয়োজিত আছেন। কারখানাটিতে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়োগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ তৈরি করে কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়। কারখানাটিতে প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকার হতদরিদ্র অসহায় বিধবা নারী শ্রমিকদের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে কাজ দেয়া হয়। কারখানাটিতে নারী শ্রমিকেরা বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, গামছা ও থান কাপর তৈরি করেন। নারীদের তৈরি করা বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক জেলার গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশ ও বিদেশের নামিদামি শো-রুমে।

জানা যায়, কারখানার মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা জাকিয়া শাহারুদ খান রুনা অসহায় দারিদ্র মানুষের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জাহাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ও এমিরাত ফ্রেন্ডশিপ হাসপতালে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এগুলোর পাশাপাশি গরিব অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্ত বিধবা নারী যারা সংসার ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন না সেই সকল নারীদের আত্নসামাজিক উন্নয়নের জন্য আয়বর্ধন মূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দেন। 

সরেজমিন উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যাপুর নিরাশির পাতার এলাকায় নদী রিসার্স এন্ড ট্রেইনিং সেন্টার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দক্ষ নারী শ্রমিক দিয়ে উইভিং, ড্রাইং, প্রিন্টিং, টেইলারিং ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, নেপকিন, ডাষ্টার, গামছা, থান কাপড়, কুশন কভার, থ্রিপিচ এবং টেইলারিং এর মাধ্যমে মাক্স, এ্যপরোন, শার্ট, প্যন্ট, রানার, প্লেসমেট ও ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। এ সকল তৈরি করা পোশাকের উপরে দক্ষ নারী শ্রমিক দিয়ে হাতের নকশা তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে নারী শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রম ও দক্ষতায় তৈরি হচ্ছে বাহারি ধরনের নকশা যুক্ত পোশাক। কারখানায় নারী শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের হস্তশিল্প কারখানা। এদিকে নারী শ্রমিকদের দক্ষ করে তুলতে কারখানায় রয়েছে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। কারখানায় নারী শ্রমিকেরা কাজ করছেন সাচ্ছন্দের সাথে। এখানকার উপার্জিত আয় দিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলছে তাদের সংসার। 

কারখানায় কর্মরত রোকছানা পারভীন (২৪), মোসলেমা বেগম (৩০) ও শিরিনা বেগম (৪০) সহ আরও অনেক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা এখানে নারী শ্রমিকেরা সবাই স্বামী পরিত্যক্ত বিধবা। বাহিরে আমাদের কাজ করে খাওয়া সম্ভব নয় জন্য এ হস্ত শিল্প কারখানায় প্রশিক্ষন নিয়ে কাজ করে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করতে পারছি। তারা আরও বলেন, প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এ হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠায় আমরা অনেক আনন্দিত ও গর্বিত।

হস্তশিল্প কারখানার সিনিয়ির ম্যনেজার মোখলেছুর রহমান জানান, এ হস্তশিল্প কারখানায় হতদরিদ্র অসহায় ও বিধবা নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের উইভিং, ড্রাইং, প্রিন্টিং, টেইলারিং ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাড়ি, বেনারশি, সিল্ক, হাফসিল্ক, ওড়না, নেপকিন, ডাষ্টার, গামছা, থান কাপড়, কুশন কভার, থ্রিপিচ এবং টেইলারিং এর মাধ্যমে মাক্স, এ্যপরোন, শার্ট, প্যন্ট, রানার, প্লেসমেট ও ব্যাগ তৈরি করা হয়। এরপর তৈরিকৃত পোশাক সহ অন্যান্য কাপরের উপর নকশা করা হয়। নকশাকৃত পোশাক গুলো প্যাকেটিং করে ঢাকার বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় দুটি শো-রুমে বিক্রি করা হয়। এছাড়া সিমীত আকারে দেশ ছেড়ে বিদেশে লুবজেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, ইতালি ও জার্মানেিত রপ্তানি করা হয়।   

তবকপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে হস্তশিল্প কারখানা গড়ে উঠায় আমরা ইউনিয়নবাসী গর্বিত। এ শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় হতদরিদ্র অসহায় ও বিধবা নারীরা অনেকে সাবলম্বি হতে পারছেন। তারা নিজেরাই পরিশ্রম করে সংসার পরিচালনা করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরকম হস্তশিল্প কারখানার প্রসারতা যেনো দিন দিন বৃদ্ধি পায় এটাই প্রতাশা।  

আরও খবর

Sponsered content