বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর ওপর ইয়াহিয়া-টিক্কার আত্মা ভর করেছে: রিজভী

  প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি ২০২২ , ৫:২০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খানের আত্মা ভর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রিজভী এমন মন্তব্য করেন।
সরকারের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের চোখে ধরা পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
গোটা পৃথিবীব্যাপী এই সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘এদের (সরকার) গুম, খুন ও ফ্যাসিবাদের আস্ফালনের মুখে দেশের অনেক লোক বলতে সাহস করেনি। কিন্তু কোনো কিছু ঢেকে রাখা যায় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে সব কিছু ধরা পড়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিচ্ছে। সরকার কত গুম করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে- সব আস্তে আস্তে গর্তের ভেতর থেকে বের হচ্ছে।’
গুম ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তার ভাষ্য, পুলিশ সরকারের পক্ষ থেকে গুম ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। ‘আমার ছেলে বা আমার স্বামী নিজে নিজেই হারিয়ে গেছে’- এ ধরনের স্টেটমেন্ট লিখে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষর করতে বলছে। অনেকেই প্রতিবাদ করেছে। এই ধরনের একটি প্রচেষ্টা সরকার নিয়েছেন, যাতে বিশ্বকে দেখানো যায়- যারা গুম হয়েছে তারা নিজে নিজে হারিয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, ‘আসলে তো কোনো কিছু আটকে রাখা যায় না। আটকে রাখা যায় না বলেই বিএনপি ব্যস্ত থাকে তাজমেরী ইসলামকে নিয়ে, বিএনপি ব্যস্ত থাক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে। আর ফাঁক দিয়ে সরকার এই কাজগুলো করে। কারণ, চারদিকে আজ ধিক্কার উঠেছে, চারদিকে আজ সমালোচনার ঝড় বইছে। কোনো লাভ হবে না। তাজমেরী ইসলামের মতো একজন শিক্ষাবিদকে কারাগারে পাঠিয়ে লাস্ট পেরেকটা আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই মেরেছেন আপনার কফিনে, আপনার সরকারের কফিনে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউটাব) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলামের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
রিজভী বলেছেন, ‘আজ শিক্ষকরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে তাদের রাস্তায় থাকার কথা নয়। তাদের থাকার কথা ছিল শ্রেণিকক্ষে পাঠদানরত অবস্থায়। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী আপনার মধ্যে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের আত্মা ভর করেছে। ড. তাজমেরী এস ইসলাম একজন শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম্বার ওয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন, চেয়ারম্যান, ডিন, হল প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আপনি কী কারণে তাকে কারাগারে প্রেরণ করলেন? কী উদ্দেশ্যে?’
তাজমেরী ইসলাম প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘তার সাথে আমরা যতবার কথা হয়েছে, মনে হয়েছে তিনি একজন ছাত্রসুলভ শিক্ষক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, কোন রুচিতে কোন যুক্তিতে তাকে কারাগারে পাঠালেন?’ আমরা ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। তাজমেরী ইসলামকে যেদিন কারাগারে নেওয়া হয়েছে, সেই দিনকে আমরা বুদ্ধিজীবী নির্যাতন দিবস পালন করব।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই প্রতিবাদী মানববন্ধন থেকে আমি এই মুহূর্তে তার মুক্তি দাবি করছি। তাকে মুক্তি দিন। অন্যথায় স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলনের এমন দাবানল তৈরি হবে, সেই দাবানলে প্রধানমন্ত্রীকে কেউ আর পাহারা দেবে না। আপনার পতন অবিসম্ভাবী হবেই।
ইউটাবের প্রেসিডেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেটে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, কামরুল আহসান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আনিসুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মতিনুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমজাদ হোসেন, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, ডক্টরস অ্যসোসিয়েশনের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামীমুর রহমান শামীম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রাকিবুল ইসলাম, আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by