প্রতিনিধি ২৪ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:৩১:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, লেকের(ময়নাদ্বীপ) নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষা এবং পরিযায়ী পাখিদের বিচরণের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি ও রক্ষায় নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে নোবিপ্রবি প্রশাসন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় গবেষণা ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা গ্রহনের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
প্রশাসনের এমন কর্মযজ্ঞকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ময়নাদ্বীপের সৌন্দর্য নষ্ট করছে টং দোকানীরা। লেকের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি টং দোকান। যেখান থেকে প্রতিদিন
ফেলা হচ্ছে পলিথিন, চিপসের প্যাকেটসহ রান্না করা ময়লা ও অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য। আবার নষ্ট হওয়া খাবার এবং বিভিন্ন সবজির খোসাও ফেলা হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,’ টং দোকান থেকে অপচনশীল ময়লা,পলিথিন,চিপসের প্যাকেটসহ রান্না করা খাবার ফেলার কারণে ময়নাদ্বীপের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আবার দোকানের সকল ময়লা পানিও ফেলা হয় এই দ্বীপে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম না থাকায় যে যার ইচ্ছেমতো যত্রতত্র ফেলছে ময়লা। অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য বৃষ্টি ও বর্ষার পানির সঙ্গে নেমে যাচ্ছে দ্বীপে। ফলে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েই চলেছে। যার কারণে ঐ এলাকায় আড্ডা দিতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এইসব বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে শান্তিনিকেতন এবং মেডিকেল এলাকায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়না দ্বীপ এবং টং দোকানের পাশেই নোবিপ্রবির একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের অবস্থান। টং দোকানের ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধে চিকিৎসা সেবা দিতে নির্বিঘ্ন হচ্ছে মেডিকেল সেন্টারে। পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ায় নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। পচনশীল ময়লার দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে বাতাস। ফলে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে শান্তিনিকেতন এলাকা।
আরো জানা যায়, দ্বীপের আশেপাশে কোথাও নেই ময়লা সংরক্ষণের পাত্র ও বর্জ্য শোধনাগার। বাধ্য হয়েই দোকানীরা ময়না দ্বীপেই ফেলছে।
মেডিকেল সেন্টারের এক কর্মকতা জানায়, ‘ টং দোকানের সব ময়লা এই ময়না দ্বীপে ফেলা হয়। ফলে দ্বীপের সৌন্দর্য নষ্টসহ মশা-মাছি উপদ্রব বেড়েছে। পাশাপাশি বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মেডিকেল সেন্টারে মশা মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি এবং বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যা আমাদের মেডিকেলে সেবা দিতে নির্বিঘ্ন হচ্ছে।
প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় উদ্বেগ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন,’ আগে গানে আড্ডায় লোকারণ্য হয়ে থাকত শান্তিনিকেতন। এখন টং দোকানীদের ময়লা এবং রান্নার নানা বর্জ্য ফেলার কারণে মশা মাছির উপদ্রব ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যার কারণে এখন আর এখানে বসে থাকা যায়না। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ময়লা সংরক্ষণাগার, শোধনাগার নির্মাণ ও সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা ফয়সাল নাঈম বলেন,”ময়নাদ্বীপ নোবিপ্রবির সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। প্রতিবছর অতিথি পাখিদের বিচরণের কারণে এর পরিচিতি ক্যাম্পাস পেরিয়ে সারাদেশে ছড়িয়েছে। কিন্তু এর পরিবেশ যদি আমরা প্লাস্টিক সহ অন্যান্য ময়লা আবর্জনা ফেলার মাধ্যমে নষ্ট করে ফেলি তাহলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে এখানে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। আমি শুনেছি সম্প্রতি ময়নাদ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমি তাদের কাছে দাবি জানাবো এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার”
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাট ও হাউজিং শাখার প্রধান ডেপুটি রেজিস্টার মো. গোলাপ হোসাইন বলেন, ‘ প্রতিটি টং দোকান মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে ময়না দ্বীপে কোনো প্রকার ময়লা ফেলা যাবেনা। নির্দেশনা অমান্য করে তারা ময়না দ্বীপে ময়লা ফেলছে। তাদেরকে নির্দিষ্ট জায়গায় বস্তায় বা বিনে করে ময়লা জমা করে রাখার জন্য বলা হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের গাড়ি গিয়ে ময়লা নিয়ে আসবে। যারা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের প্রতি আমরা আরো কঠোর হবো। এছাড়াও আমরা আরো ১০ টি ডাস্টবিনের জন্য আবেদন করেছি। এই আবেদনটি বাস্তবায়িত হলে শান্তিনিকেতনে আরো ২ টি ডাস্টবিন বসানো হবে। ময়না দ্বীপকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আমরা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
ময়লা ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে টং দোকানীরা বলেন, ‘ দোকানের সামনে ময়লা রেখে দেওয়ার বিষয়ে আমরা অবগত নই। আপনার মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। এখন থেকে ময়না দ্বীপে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকবো। ‘
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘ ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সাথে কথা বলেছি। এছাড়াও টং দোকানীরা যাতে দ্বীপে ময়লা আর্বজনা না ফেলে সেজন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিবো।’