প্রতিনিধি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৫:০৯:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সংঘটিত ৭৯টি অগ্নিকান্ডে বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের হিসাব মতে মোট ৩৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অভ্যন্তরিণ সড়কের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রধানসড়কে নিত্য যানযটের কারণে ফায়ার সার্ভিস যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারা ও বিলম্বিত ফোনের কারণে এ ক্ষয়ক্ষতি বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. মিযানুর রহমান।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটি। সে থেকে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে অগ্নিনির্বাপকের কাজ করে যাচ্ছে। এ স্টেশনের একটি পানিবাহী গাড়ী, একটি জি-বক্স টানাগাড়ী (পাম্প ও উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত) অগ্নিনির্বাপকের কাজে নিয়োজিত। পাশাপাশি অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে, জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল-মাদরাসা-কলেজ, বিভিন্ন বাজার এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করেছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা ও যানযটের কারণে সংঘটিত অগ্নিকান্ড সামাল দিতে প্রায় সময়ই বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে হিমশিম খেতে হয়। এরপরও গত বছরে (২০২৪ সাল) বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংঘটিত অগ্নিকান্ডের হাত থেকে ৭ কোটি ২১ লক্ষ টাকার সম্পদ উদ্ধার করেছে।
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুলার আগুন (ইলেকট্রিক, গ্যাস সিলিন্ডার, মাটির চুলা) থেকে ২টি অগ্নিকান্ডে ১০ লাখ টাকার সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ (বিদ্যুৎ শর্টসার্কিট) থেকে ১৬টি অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমাণ ২৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং উদ্ধার করা হয় ১১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার সম্পদ। বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে ১টি অগ্নিকান্ডে ক্ষতি ১০ হাজার টাকা এবং উদ্ধার হয় ৫০ হাজার টাকার সম্পদ। ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার ঘটনায় ১টি অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হয় ৫ হাজার টাকার সম্পদ এবং উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ টাকার সম্পদ। কয়েলের আগুনে ২টি অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা এবং উদ্ধার করা হয় ২০ লক্ষ টাকার সম্পদ। অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতার দেওয়া ঘটনায় ৪টি অগ্নিকান্ড ঘটে। অজ্ঞাত ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ২৪টি অগ্নিকান্ড থেকে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে এবং উদ্ধার করা হয় ৫ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদ।
স্থানীয় সচেতন মহলের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘বাঁশখালীতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে অভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশা। খুব সরু এবং সংকোচিত সড়কপথ তার ওপর খানাখন্দের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ফায়ার সার্ভিস যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না। অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীও প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে সুবিধাবঞ্চিত বাঁশখালী জনপদের অধিকাংশ এলাকা। সড়ক প্রসস্থকরণ করলে যথাসময়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে বলে জানান তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় শতবর্ষী পুকুর ভরাটের ফলে পানির উৎসের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে লোকজন।’
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার মো. মিযানুর রহমান জানান, ‘বাঁশখালীতে বেশীরভাগ অগ্নিকান্ড বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সংঘটিত হয়। বিদ্যুতের ওয়ারিং সঠিকভাবে না করা, পুরানো লাইন সংযোগ চেক না করার কারণে এ ঘটনা ঘটে। তাছাড়া আমরা অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে চেষ্টা করি। অনেকের কাছে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের জরুরী ফোন নম্বর সংগ্রহে নাই। যার কারণে যথাসময়ে ফোন পাই না। অনেকে সরকারী জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সেবা নেয়। এতে তারা বিলম্ব সৃষ্টি করে, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে প্রধান সড়কেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বাস স্টেশন। যার কারণে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়েও যানযটের ফলে আমরা ঘটনাস্থলে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারিনা। গ্রামিণ অভ্যন্তরিণ সংকোচিত সড়ক দিয়ে আমাদের ধমকল গাড়ী ডুকতে না পারায় অনেক সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছেও মূল স্পটে যাওয়ার সুযোগ হয় না।’