প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২৪ , ৩:৩৬:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
বাগেরহাটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ও নদী ভাঙ্গনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার পরিবার। যার পরিপ্রেক্ষিতে আলাদাভাবে বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
এছাড়াও বাগেরহাট জেলা সদর ,রামপাল, শরনখোলা, মোংলা, মোরলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদরে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। একারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে দাবি তুলছে এই সংস্থাগুলি। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বাড়াতে স্থানীয় উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে সেমিনার, পথ নাটক, মঞ্চ নাটক ও মানববন্ধন করছে সংস্থাগুলি।
বাগেরহাট জেলার দড়াটানা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে মারিয়া পল্লী, যা এখন কিছুটা নদী ভাঙনের মুখে। এছাড়াও রামপাল উপজেলা দক্ষিনাঞ্চলের সমুদ্র নিকটবর্তী হওয়ায় এই এলাকায় মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মেনে নিয়ে যুদ্ধ করে জীবন অতিবাহিত করছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের। তেমনি একটি জনপদের নাম হলো রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের উড়–বুনিয়া ও রোমজয়পুর এলাকাবাসী। নদী ভাংগনে বিলিন হয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। কথা হয়েছিল এই প্রতিবেদকের সাথে পেড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা আঃ গফফার মোল্লার সাথে। তিনি বলেছিলেন “সরকার আসে, সরকার যাং, আমাদের দুঃখ কেউ দেহে না। অনেকবার চেয়ারম্যান আইছে-গেছে, আবার বাগেরহাট থেকে বড় স্যারেরা আইছিলো, বাধ দিয়ে দেবেন কইছিলো- আজও দিলো না। ছোট ছোট পোলাপান নিয়ে রাতে ভয়ে ভয়ে ঘুমাই, কখন জানি নদীতে চলে যাই।” এরকম শত শত গফফার আছে যাদের শেষ আশ্রয়স্থলটুকু নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে দুর্যোগ পরিস্থিতি দিন দিন জটিলতর হচ্ছে। পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ভূমি ক্ষয়, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনজীবন বিপর্যস্ত। এই সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে একাধিক সংগঠন। উপকূলের মানুষের জন্য অবিলম্বে উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই বাঁধ নির্মাণ, দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং জীবিকা রক্ষায় বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অঞ্চল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চল প্রকৃতিগত ভাবে একটি ঐশ্বর্যপুর্ণ এবং ভু-রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপকূল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি অনাচার বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আমাদেরকে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখী হতে হবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত অবকাঠামোর অভাবে মারাত্মক সংকটে আছে উপকূলের জনগণ। তাই উপকূলের উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব থেকে যে অনুদানগুলো বাংলাদেশে আসে তার অধিকাংশ যাতে দক্ষিনাঞ্চল তথা বাগেরহাট জেলায় বরাদ্দ হয় তার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ভুক্তভোগী মহল। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদে যথাযথ বাজেট বরাদ্দসহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুব সমাজ কাজ করে যাচ্ছে কাধে কাধ মিলিয়ে। এমনি এক যুবক মোঃ মাফুজ ইসলাম ও অর্ণব মন্ডল ভোরের দর্পণকে জানান রামপালের হতদরিদ্র্য পরিবারের লোকজন আজও ভয়ে ভয়ে থাকেন কখন তাদের বাড়ি ঘর টুকু বিলিন হয়ে যায় পেড়িখালীর নদীতে। কথা হয়েছিলো হতদরিদ্র্য পরিবারের কিশোরী কন্যা মরিয়ম খানমের সাথে। তিনি লজ্জামুখে জানান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের এলাকায় লবণাক্ততার জন্য নদীতে মাছ ধরার কারণে আমাকে পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখতে হয় তা না হলে হতে পারে মারাত্মক সংক্রমক ব্যাধি। নদী ভাংগন ও ভেড়িবাধের বিষয় রামপাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার কাছে এ বিষয়ে একাধিক আবেদন এসেছে।
আমি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানিয়েছে। পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বেরুনী প্রতিবেদককে বলেন আমি ইতিমধ্যে রামপালের রোমজয়পুর গিয়েছি। একাধিক আবেদন ও পেয়েছি নদী ভাংগন ও ভেড়িবাধের জন্য। বর্তমানে আমাদের কোন প্রকল্প নেই। তাই এ কাজটি করতে দেরী হচ্ছে। অত্র এলাকায় প্রকল্প গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকল্প পেলে ভেড়িবাধটি করা সম্ভব হলে এলাকার জনসাধারণের কিছুটা উপকৃত হবে।