রাজশাহী

বড়াল যেনো ময়লার ভাগাড়

  প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২১ , ৮:২৫:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

এম এ জিন্নাহ, চাটমোহর (পাবনা) :

চাটমোহর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত দেশের অন্যতম নদ বড়াল । দখলবাজদের কালো থাবার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে দূষণের শিকার নদীটি। বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বড়াল নদ। ফলে বড়ালে পানি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বড়ালে ফেলা হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরা, হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য, মুরগীর উচ্ছিষ্ট আর পৌরসভাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা।

বড়াল পাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মুরগির খামার। এই সকল খামারের পাইপ নামানো হয়েছে বড়ালে। তাছাড়া প্রাণ কোম্পানীর ড্রেন গিয়ে পড়েছে এ নদীতে। চাটমোহর পৌর এলাকার পুরাতন বাজার ও নতুন বাজার খেয়াঘাটে প্রতিদিন ময়লা ফেলে স্তুপ করা হচ্ছে। সেই ময়লা এখন মিশে যাচ্ছে নদের পানিতে। সবমিলিয়ে বড়াল এখন চরমভাবে দূষণের শিকার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কোন পদক্ষেপ নেই এ বিষয়ে। এই বর্ষায় যৌবন ফিরে পেয়েছে পদ্মার শাখা নদ বড়াল। বেগে বয়ে চলেছে এই নদ। নতুন পানিতে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। নদে ফেলা হচ্ছে সারি সারি চাঁই, খোপ ও জাল। বড়াল নদের উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাটে।

এই নদ পদ্মা ও যমুনার সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যায়। তখন এর বুকে ফসলের আবাদ হলেও, বর্ষায় কানায় কানায় ভরে উঠেছে এই নদ। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে জেলেসহ তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে। বড়াল রাজশাহীর চারঘাট থেকে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনায় মিশেছে পাবনার বেড়া উপজেলার কাছে। বড়াল চলনবিলের প্রধান নদ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ১২৫ মিটার।

বড়াল বর্ষা মৌসুমে রূপ ছড়িয়ে দিলেও পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মরে যেতে থাকে। দখলদাররা নদীর পাড় দখল এবং মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে দূষিত বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে পানি দূষিত করা হয়। এখন নির্বিঘ্নে বড়ালে ফেলা হচ্ছে সকল প্রকার বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা। বড়ালকে বাঁচাতে পাবনার চাটমোহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বড়াল নদী রক্ষা কমিটি হয়েছে। কমিটির নেতারা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনও করে আসছেন। শেষে বড়ালে পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নাটোরের নারদ ও মুসা খাঁ নদের আংশিক এবং চারঘাটের বড়ালের প্রবেশমুখ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্পে নারদ, মুসা খাঁ ও বড়ালের প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। এছাড়া চাটমোহর উপজেলায় বড়ালে উপর নির্মিত ৪টি বাধ অপসারণ করা হয়। নির্মাণ করা হয় ব্রিজ। সরকার বড়ালের অবৈধ বাঁধগুলো অপসারণ করায় এবার বর্ষায় স্রোত এসেছে এই নদে।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমের মতো সারা বছর বড়ালে পানি থাকলেই একে বাঁচানো সম্ভব। বড়াল যেভাবে দখল হয়েছে, যা এখনও হচ্ছে, সেটি রোধ করা দরকার। একইসাথে বড়াল এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সকল এলাকার বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বড়ালে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বড়াল নদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেছেন, বড়ালকে নিয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটি ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমাও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি যদি অনুমোদন পায় তাহলে বড়াল আবারও খনন করা যাবে। স্লুইসগেটগুলো সংস্কার করা হবে। তখন স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত হবে। এতে বড়ালে সারা বছরই পানি থাকবে।

পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন এক ভার্চুয়াল সংলাপে বলেছেন, বড়াল, ইছামতিসহ সকল নদী দখল ও দূষণরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নদী বাঁচাতে সরকার বদ্ধপরিকর।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by