চট্টগ্রাম

ভালো ফলন হলেও দাম কম থাকায় হাসি নেই শঙ্খচরের সবজি চাষিদের মুখে

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭:১২:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভালো ফলন হলেও দাম কম থাকায় হাসি নেই শঙ্খচরের সবজি চাষিদের মুখে

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ নদ তীরবর্তী চরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবজির ভালো ফলন হলেও চাষের খরচ অনুযায়ী বিক্রয়মূল্য না পেয়ে মুখে হাসি নেই শঙ্খ চরের কোনো কৃষকের। যে দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তা দিয়ে উৎপাদিত ফসলের খরচের অর্ধেকও উঠে আসবে না বলে জানান চাষিরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এবং সংরক্ষণের জন্য হিমাগার না থাকায় কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। মধ্যসত্বভোগীরা লাভবান হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে শুরুর দিকে বিভিন্ন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ করা গেলেও এখন খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে চাষীদের। সবজির দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের সামান্য স্বস্তি এলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চাষীরা উৎপাদনে আশা হারিয়ে ফেলবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খ নদের উভয় তীরের এক পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন ভোরের কুয়াশায় ফসলের মাঠে গিয়ে দিনভর সবজি পরিচর্যায় শ্রম দিচ্ছেন চাষিরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত শঙ্খচরের মাটি সবজি চাষের জন্য বেশ উর্বর এবং উপযোগী হওয়ায় এখানে সব ধরনের সবজি চাষ হয়। বছরের ১২ মাস  এ অঞ্চলের চাষীরা শঙ্খচরে সবজি চাষ করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে বাজারে ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি সবজি বাজার হিসেবে পরিচিত দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সবজির পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন চাষীরা। প্রতি কেজি মুলা ৫ টাকা, ফুলকপি ৭ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে প্রতি কেজি বেগুন ১৫ টাকা, শিম ৩০ টাকা, বরবটি ২৫ টাকা, তিতা করলা ৪০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, শসা ২০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া আকারভেদে প্রতি পিস ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং লাউ ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দোহাজারী পৌরসভা সদরের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়- প্রতি কেজি ফুলকপি ১৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, তিতা করলা ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা,, শশা ৪০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি, হাসিমপুর, বৈলতলী, বরমা ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, পুরানগড়, ধর্মপুর, নলুয়া, চরতী ও আমিলাইশ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার চাষি শঙ্খচরে সবজি চাষাবাদ করেন। শঙ্খচরে উৎপাদিত বেগুন ও মুলার আলাদা কদর রয়েছে সারা দেশব্যাপী। এছাড়া শিম, ঢেঁড়স, করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঝিঙ্গা, তিত করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পেঁপে, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাক উৎপাদন হয় এখানে।

শঙ্খ চরের সবজি চাষী জাফর আহমদ বলেন, ফুলকপি উৎপাদন করতে চারা কেনা, সার, কীটনাশক, কৃষি শ্রমিকদের মজুরি পরিবহন খরচসহ একটি চারায় ১২ থেকে ১৫ টাকা খরচ পড়ে। ১কেজি ওজনের হলে ৭টাকা আর দেড়কেজি ওজনের হলে ১০টাকা পাই। এবছর ফুলকপিতে লাভ দূরে থাক লোকসান হবে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো।

কিল্লাপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিন নামে শঙ্খ চরের এক সবজি চাষী বলেন, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রী-কন্যা ও পুত্রবধূর গহনা বন্ধক দিয়ে সবজি চাষ করে চাষীরা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। তবে মধ্যসত্বভোগী ও খুচরা বিক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন।

শঙ্খ চরের আরেক চাষী দোহাজারী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আহমদ মিয়া বলেন, শঙ্খচরে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু হিমাগার না থাকায় উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। হিমাগার না থাকায় সবজি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। শঙ্খচরে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য দোহাজারীতে হিমাগার নির্মাণ করা গেলে বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি কৃষকেরাও সবজির ন্যায্য দাম পাবে।

এই ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আজাদ হোসেন বলেন, “অন্য মৌসুমের চাইতে শীতকালে সব ধরনের সবজির ফলন ভালো হয়। যে কারণে এই সময় বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমে যায়। শীতকালীন এসব সবজি প্যাকেজিং করে সংরক্ষণ করা গেলে ক্রেতা ও চাষী উভয়ই উপকৃত হতেন। হিমাগার নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। চন্দনাইশে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষমাত্রা ২ হাজার ২৫৬ হেক্টর। আশা করছি লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। সবজি আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও আট ইউনিয়নের ৪ হাজার ৬০০ কৃষককে সবজি বীজ, সার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করছেন।”

আরও খবর

Sponsered content