প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪:৩২:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য কাঁদি ভরা খেজুর গাছ, গাছালি, মুখোরোচক রসের স্বাদ ভুলতে বসেছে প্রজন্ম।
ভোলায় খেজুর রসের চাহিদা থাকলেও আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় অনেকে মুখোরোচক স্বাদের রস ইচ্ছা থাকলেও প্রাপ্য হচ্ছে না। এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের দ্বারে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতকাল আসলে গাছিরা বিকালে গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে ভোর সকালে রস বিক্রি করত। এখন গাছ নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু’একটি খেজুর গাছ থাকলেও তাও সবল নয়। দুর্বল প্রকৃতির গাছগুলোতে আগের মতো রস পড়ে না।
বর্তমানে গাছিরা পরিবেশ দূষণকে দায়ি করে বলেন, আগে পরিবেশ ছিল ভালো, প্রতিটি ফল মূলের গাছে ছিল ফুলে ফলে ভরা। বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে ফল মূলের গাছে আগের মতো ফল ধরে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছে ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরত ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত।
খেজুর রস সংগ্রহকারী (গাছালি) ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের, দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের নাসির ফলবান বলেন, দুই বছর আগে আমার ৬টি গাছ থেকে দৈনিক রস সংগ্রহ হতো প্রায় ২৩/২৪ কেজি। আর এ বছর এসে সংগ্রহ হচ্ছে ৫-৬ কেজি। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন দূষণে গাছের শক্তি ও ভিটামিন কমে গেছে।
তার মতে আগে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল অত্র এলাকায়, কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও গাছের মালিকরা গাছগুলো লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করে দেয়ায় খেজুর গাছ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় প্রতি কেজি খেজুর রস বিক্রি হতো ৮-১০ টাকায়। বর্তমানে সে খেজুরের রস ১০০-১২০ টাকা প্রতি কেজি। অনেক জায়গাতে ১৫০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রসের চাহিদা অনেক, কিন্তু এরপরও চাহিদা মতো দেয়া যায় না, অনেকে রসের জন্য ঝগড়াও করেন। পালা করে করে রস দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রসের পিঠার মজাই আলাদা বলে বছরে একবার প্রতিটি পরিবারে রস সংগ্রহ করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ডুই পিঠা (ভাপা পিঠা), গুরা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা, হাতজারা পিঠা খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আপনজনের বাসায়ও নিয়ে যান। দৃষ্টি গোছরের জন্য খেজুর রস।
সূযোগের অভাবে দুরন্ত কিশোররা আগের মতো পথের খেজুর গাছের ফোঁটা রস আর খেতে পারে না। খেজুর রস পানের আগ্রহ কোনো কালেই যেন বিলুপ্ত না হয় সেজন্য পরিবেশ বান্ধব এই খেজুর গাছ লাগানো ও বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা নেয়ার দাবি করেন তিনি।