প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:০৩:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এবার ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। মাসের হিসাব গরমিল করে দাপট দেখাচ্ছে লম্বা সময় ধরে। মৃত্যু-আক্রান্তের সব রেকর্ড এরই মধ্যে ভেঙেছে। এ সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাই মশাবাহিত রোগ ও বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতির জন্য একটি প্রকল্প নিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)।
বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষায় বৈদেশিক গবেষণা বাবদ ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর পলিসি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে গবেষণা করতে বিদেশে যাবেন ৬০ কর্মকর্তা। এজন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চায়না, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ব্রাজিলকে বেছে নেওয়া হতে পারে। মূলত ভেক্টর ম্যানেজমেন্টে এসব দেশ সফল হয়েছে। প্রকল্পে ২০টি পাবলিক টয়লেট খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। আর একটি ফগার মেশিন কিনতে ব্যয় সংস্থান করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা অথচ বাজারে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ভালো মানের ফগার মেশিন পাওয়া যায়।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) এ সম্পর্কিত ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) পরিকল্পনা কমিশন এলজিইডির প্রস্তাবের বেশকিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া নানা খাতের ব্যয় নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুব যৌক্তিক না হলে কোনো বিষয় আমরা অনুমোদন দেবো না। ৬০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক গবেষণার বিষয়টি এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি। যদি দেখি এটা দরকার নেই তবে বাদ যাবে।’
পিইসি সভায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের এক প্রতিনিধি বলেন, এক হাজার ২৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্পে মাত্র ৪৪৭ কোটি টাকার ক্রয় পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ৮৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ক্রয় পরিকল্পনাবহির্ভূত। ক্রয় পরিকল্পনাবহির্ভূত আইটেমগুলোর ব্যাখ্যা পুনর্গঠিত প্রকল্পে থাকা যৌক্তিক হবে।
একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে প্রায় তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) মশা নিয়ন্ত্রণের এ প্রকল্পে। শুধু পাবলিক টয়লেটই নয়, এমন নানা ব্যয়প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। জনবহুল জায়গায় ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন, মশা মারার ফগার মেশিন কেনা বা ময়লা সরানোর ট্রলি কেনাসহ প্রকল্পটির অধিকাংশই কেনাকাটা বেজড। এক হাজার ২৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্পে এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে দেখা যায়, ২০টি মোবাইল টয়লেট বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অথচ দেশের সবচেয়ে বেশি টয়লেট নির্মাণ করা স্থানীয় সরকার বিভাগেরই আরেক প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) ২০ থেকে ২২ লাখ টাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছে। ঢাকা শহরে সেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রকৌশলী ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন।
প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি করা হয়েছিল। যার সভাপতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এপিএস নুরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি ঠিক নয়। মূলত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে রিসার্চ করার খাতে টাকা রাখা হয়েছে। যে সব দেশ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফল হয়েছে সেসব দেশে রিসার্চ করতে যাবেন কর্মকর্তারা। আগে দুই মাস ডেঙ্গু থাকতো, কিন্তু এখন সারা বছর দেখা যাচ্ছে ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে। এই সময়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। এ বিষয়ে রিসার্চ করা হবে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়েছে। আমাদের এ বিষয়ে গবেষণা দরকার ও বিশেষজ্ঞ তৈরি জরুরি। এজন্য রিসার্চ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে ডেঙ্গুর পূর্বাভাস নেই। এটা আমাদের দরকার। এটা নিয়ে রিসার্চ দরকার।’