বাংলাদেশ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা, নেপথ্যে কী?

  প্রতিনিধি ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৬:৫৭:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা, নেপথ্যে কী?
ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ ঘিরে কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত দেশের পরিস্থিতি। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্রদের ওপর মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের ধারাবাহিকতায় গাজীপুরেও সাবেক মন্ত্রীর বাসভবনে হামলা করতে গিয়েছিল ছাত্র-জনতা। তখন এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের ওপর হামলা চালায়। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে ভিন্ন কাহিনি। মূলত ফাঁদ পেতে ছাত্রদের সেখানে নেওয়া হয়েছিল। তাদের ওপর হামলাও ছিল পরিকল্পিত।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের পরিচয় গোপন করে কেউ কেউ ফোনে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের জানান, সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে কয়েকজন ছাত্রকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের মুক্ত করতে যেন তারা আসেন। তখন তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ছাত্ররা সেখানে যান। এই সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে প্রচার করে তাদের ওপর হামলা চালায়।

সূত্র জানায়, ঘটনাটি পরিকল্পিত। এর পেছনে মূল ইন্ধনদাতা গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনিই মূলত ঘটনার নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তার একটি হুমকিমূলক বক্তব্য থেকেও সেটার আভাস পাওয়া গেছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে একটি ফোনকলে জাহাঙ্গীর হুমকি দিয়ে বলেন, ‌‘আমাদের সব টিম রেডি আছে। আমাদের সম্রাট ভাই এখানে আছেন। রাজধানীতে আমরা থাকতে চাই। আমাদের স্পষ্ট কথা, যে রাজধানীতে আমাদের মানুষ দিনে শান্তিতে ঘুরতে পারবে না, চলতে পারবে না, সেই রাজধানীর মানুষ রাতে ঘুমাতে পারবে না। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যে রাজধানীতে আমরা দিনে থাকতে পারব না সেই রাজধানীর মানুষের ঘুম আল্লাহ দিবে না। আমরা সেইভাবে আমাদের তৈরি করে নিয়েছি।’ 

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপনারা চূড়ান্ত খেলার মধ্যে সবাইকে নিয়ে থাকবেন। আমাদের ইতিহাসে যেন আর থুথু না পড়ে। পদ বড় নয় আদর্শ বড়। আপনারা যার যার ওয়ার্ডে থেকে আলোচনা করেন। কর্মীদের বুঝায়ে তাদের কৌশলগত ট্রেনিং দেন।’

প্রায় ছয় মিনিটের ফোন কলে তিনি আরও বলেন, ‘সব বিভাগ-জেলার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। সময়মতো মূল ব্যক্তিদের কাছে ম্যাসেজটা চলে যাবে। আমরা সময়মতো বুঝিয়ে দিতে চাই আমরা কার সৈনিক। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, আপনারা তার রেজাল্ট পাবেন।’

সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতাদের যে বৈঠকের খবর গোয়েন্দা সূত্রে গণমাধ্যমে এসেছে সেখানে জাহাঙ্গীর আলমও রয়েছেন। গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় জাহাঙ্গীর আলমের পিএসকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্র-জনতা। জাহাঙ্গীর আলমও গুরুতর আহত হন। মূলত সেই প্রতিশোধ নিতেই তিনি এবার মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গত রাতের এই ঘটনার দ্বারা মূলত সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে চান। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে গাজীপুরে শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার পেছনেও জাহাঙ্গীরের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গাজীপুরের ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দায়ী করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে ‘মোজাম্মেল-জাহাঙ্গীরের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের’ হামলার পর আজ গাজীপুরের রাজবাড়ীতে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক সারজিস আলম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘গাজীপুরে আজকেই হবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শেষ দিন। আমরা আসছি…।’

পুলিশ আসতে দেরি করেছে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক নাবওল আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ফাঁদে পড়েছে, এটা বুঝতে পেরে আমরা বহুবার পুলিশকে জানিয়েছি। তারা ঘটনার দুই ঘণ্টা পর এসেছে। যারা হামলা করেছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের লোক।’ 

নাবওল নিজেও আহত হয়েছেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাটের খবর পেয়ে আমাদের কয়েকজন সেখানে যান। পরে আমিও সেখানে গিয়ে লুটপাটের ঘটনা দেখতে পাই। এ সময় এলাকাবাসীদের লুটপাট থামাতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানোর পরই কিছু মুখোশধারী লোক আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মারধর করে। পরে আমি গাছা থানা, বাসন থানা, টঙ্গী থানা ও সদর থানায় খবর দেই। তবে তারা আসতে দেরি করে।’

তিনি জানান, হামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বেশকিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষার্থীরা এভাবে আহত হত না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের মুখ্য সংগঠক মো. রবিউল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কতিপয় লোক মহানগরের ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকাবাসী আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে ১৩ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন।’

আরও খবর

Sponsered content