রাজশাহী

মুসল্লী-পুলিশ সংঘর্ষ প্রকৌশলী একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নৈশ প্রহরী পিতা বাকরুদ্ধ

  প্রতিনিধি ৫ মার্চ ২০২৩ , ১:৩৩:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ


বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি:


পঞ্চগড়ে মুসল্লীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে নাটোরের বড়াইগ্রামের প্রকৌশলী জাহিদ হাসান (২৬) নিহত হয়েছেন। দুই মেয়ের পর জন্ম নেওয়া একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ দরিদ্র পিতা আবু বক্কর। দিনে দিনমজুর ও রাতে স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নৈশ প্রহরীর চাকরি করে একমাত্র ছেলেকে বিএসসি প্রকৌশলী পাস করিয়েছেন পিতা। মাত্র ৬ মাস হলো ছেলে জাহিদ ঢাকাস্থ বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলো। অনেক দেনা করে লেখাপড়া শিখিয়ে এখন সেই দেনা পরিশোধের সময় এসেছিলো। কিন্তু পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক জলসায় গিয়ে মুসল্লী ও পুলিশের সংঘর্ষে ইটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় জাহিদ। ওই জলসায় তার পিতা আবু বক্কর সহ অন্যান্য চাচারাও অংশ নিতে উপস্থিত ছিলো। শনিবার সন্ধ্যায় একমাত্র সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি কাছুটিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন পিতা ও তার চাচারা।
জানা যায়, ছেলে জাহিদ হাসান গত শুক্রবার সকাল ১০টায় পঞ্চগড়ে পৌঁছায়। আহমদিয়া অনুসারী হিসেবে পঞ্চগড় জেলার আহমেদ নগরে অনুষ্ঠিত তিনদিনের আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক জলসায় অংশ নিতে তারা যায়। এ জলসা শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাতে। সেখানে আহমদিয়া বিরোধীরা এ জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড় শহরে শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ করে ও দুপুরে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৬) নামের দুইজন নিহত হন। সংঘর্ষে পুলিশের ৯ সদস্য ও ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে জাহিদ হাসান মাথায় ও মুখে ইটের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানায় পিতা আবু বক্কর।
বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, অনেক কষ্টে একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছে আবু বক্কর। লেখাপড়া শেখাতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সুদে ৪ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে তার। ছেলেটাও ভালো চাকরী পেয়েছিলো। ভেবেছিলো বছর দু’য়েক এর মধ্যে দেনা শোধ হলে ছেলেকে বিয়ে দিবে। কিন্তু সে ম্বপ্ন তার নিমিষেই ধূলোয় মিশে গেলো।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, শেষ নবীকে অস্বীকার করে আহমদিয়ারা গোলাম আহমদকে নবী মনে করে। ইসলামের নামে কোনো জলসায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম এটা মেনে নিতে পারে না। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও পরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি টহল চলমান রয়েছে।